মাঝরাস্তার গোলকধাঁধায় আটকা পড়ে বারবার ফিরে আসি।
চলতে চলতে চাঁদের প্রাসাদ দেখে থমকে গেলাম।হাট করে খোলা ছিল জোৎস্না উঠোন।দুইদিকে দুই সিঁড়ি।একটা নেমে গেছে পাতালের পথে, অন্যটা সোজা আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে দুই হাত।যেন ধরে ফেলবে--ছুঁয়ে ফেলবে আরেকটুখানি এগিয়ে গেলেই। এবং পাতালের সিঁড়িটা ---নেমে গেছে এক অনন্ত নির্জনতার পথে।
কোনদিকে যাবো? উত্তরণের সিঁড়ি যদি ভেঙ্গে পড়ে মাঝপথে অথবা পাতালের সিঁড়ি গভীরগহন এক অনন্তগহ্বরে ঠেলে দেয় যেখান থেকে আর ফেরা যায়না!এইসব ভাবতে ভাবতেই --বন্ধ হয়ে গেল সামনের দরোজা।সিঁড়ি নেই। দরোজাও নেই।নেই আর কোন গন্তব্য।
এটাই যখন স্বভাব হয়ে গেল --বারে বারে সঠিক পথের দ্বিধাগ্রস্থতা ; নিজেকে পথের মাঝেই ছড়িয়ে দিলাম।পথ যেখানে নিয়ে যাবে, সেখানেই থেমে যাবো নাহয়।
রোজ ভোররাতে আকাশ থেকে নীল নীল যে ফুলগুলো ঝরে পড়ে,তার কোন নাম অথবা গন্ধ জানিনা আমি।
শুধু দেখি ফুলঝুরির মতো ঝরে পড়ছে থোকা থোকা আলোকরেনু।কোনদিন আমার হাতের মুঠোয় ধরতে পারিনি তার একটি কণাও।জানা হয়নি কেমন তাদের ঘ্রাণ অথবা উষ্ণতা।শুধু দূর থেকে দেখা সেই আলোর ঝলক ধরে রাখি চোখের স্মৃতিতে আর নয়নমণিতে সোচ্চার রাখি সেই বর্ণানুভব স্তবপাঠের মতো; হয়তো কোন একদিন ধরা দেবে সুগন্ধময় উত্তাপের সাথে।নিজেকেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে দেই আকাশ এবং সমুদ্রের সীমাহীন নীলে । কেউ কেউ হয়ত খুঁজবে এই নীলসমর্পনের পিছনে কোন এক অজানা রহস্যময়তা,ধিক্কার অথবা করতালির সুযোগ।তবে আমিও কখনো কোন সুযোগ রাখিনা রহস্যসন্ধানী টিকটিকিদের জন্য।
একবার এক খাঁচা বিক্রেতা আমাকে বলেছিল--খাঁচা পাখির থেকে বেশী মূল্যবান একজন গৃহস্থের কাছে।পাখি যখন তখন ডানা ঝাপটায় ,হৈচৈ করে । পালিয়ে যেতে পারে সুযোগ পেলেই।খাঁচা চিরকাল স্থির ।গৃহস্থবারান্দার শোভা।আবার নতুন কোন পাখি পোষা যায়।পুরোনো খাঁচা। নতুন পাখি।নতুন বুলি।
সন্ধানে আছি ---কিন্তু এখনো দেখা পাইনি কোন পাখিবিক্রেতার যার কাছে জেনে নিতে পারি তার নিজস্ব হিসাবনিকাশ ।অবশ্য খাঁচা অথবা পাখিওয়ালা দুজনেই বলবে নিজেদের মতো করেই ।এটাই নিয়ম।
পথ।
দু'সারি গাছের মাঝখানে ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসা ছায়ামগ্ন একটা টানেলের ছবি,যা মিশে যাচ্ছে অনন্তের সাথে।দূরপাল্লার বাসে যেতে যেতে কতোবার দেখি এই দৃশ্য আর হারিয়ে যাই অনন্তবিভোরতার ভিতরে।
পথিক।
একতারা হাতে গৈরিকবেশ একজন ক্লান্তমলিন মানুষ।শ্রান্ত পায়ে হাঁটছে তবু একতারায় বাজিয়ে যাচ্ছে ঘরপালানো--ছন্নছাড়ানেশার সুর।
মানুষ নিজেইতো বাঁধে ঘর আর সেই ঘর থেকে পালিয়ে বেড়ায় অজানা পথেপ্রান্তরে।চারদেয়ালের আচ্ছাদনের ভিতরেও মনের গোপনকুঠরিতে লুকিয়ে রাখে এক বিবাগীবাউলের ছবি।দিগবলয়ের অন্যপ্রান্ত থেকে যখনতখন ছূটে আসে যাদুকরী এক ঢাকের বাদ্য। সেই দূরাগত শব্দের টানে টানে ছুটে বেড়ায় দূর থেকে দূরান্তে।
ঘরের নয়, মানুষ হতে চেয়েছে আকাশের।মুক্তবিহঙ্গের মতো। ভেবেছে একদিন কোন জাদুমন্ত্রে তারও গজিয়ে যাবে দুইটা ডানা আর উড়ে বেড়াবে আকাশের অসীম নীলিমায়। পাখি হতে না পেরেই কি মানুষ বিবাগী হয়ে গেল!আকাশের না হতে পেরে পথের। ঘর ভুলানো সুরের পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন