ত্রিশ দশক আধুনিক বাংলা কবিতার মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। ত্রিশোত্তর কবিদের কাব্য সাধনায় তাই ত্রিশের প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশের প্রভাব
বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। সংগত কারণে কবিতার নির্মাণ কাঠামো থেকে শুরু করে প্রায়োগিক উপযোগগুলোর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি প্রাথমিক পর্যায়ে এড়াতে পারেননি ত্রিশোত্তর কবিকুল। তারপরও কয়েকজন কবি তাদের মেধা-মননের উৎকর্ষে স্বকীয়তা বজায় রেখে কাব্য সাধনায় ব্রতী থেকেছেন। এ ধারার শক্তিমান কবি আবুল হাসান। বাংলা কবিতার প্রেক্ষিত বিবেচনায় ‘কবিতার যুবরাজ’ আখ্যা পাওয়া কবি আবুল হাসানের উত্তরণের সময়কাল হিসেবে ধরা হয় ষাটের দশকের মধ্যভাগ। ‘রাজা যায় রাজা আসে’ (১৯৭২), ‘যে তুমি হরণ করো’ (১৯৭৪) এবং ‘পৃথক পালঙ্ক’ (১৯৭৫) কাব্যগ্রন্থ তিনটি কবির জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়। কবির মৃত্যুর পর ১৯৮৫ সালে মুহম্মদ নুরুল হুদা, ফকরুল ইসলাম রচি ও জাফর ওয়াজেদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা’ এবং ১৯৯৪ সালে বিদ্যাপ্রকাশ প্রকাশ করে ‘আবুল হাসান রচনা সমগ্র।’ অকাল প্রয়াত এই কবির উত্তরণের দশক ষাটের দশক বিশেষ কয়েকটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করেন কাব্যবোদ্ধারা। এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, বিভিন্ন সময়ে পাশ্চাত্যের সাহিত্য আন্দোলনের ধারা বাংলা ভাষার কবিদের মধ্যে সঞ্চারিত হলেও এ দশকে বাংলা কবিতায় ভিন্নতর এক আন্দোলনের ধারা সূচিত হয়। বাংলার মাটি থেকে শুরু হওয়া ‘হাংরি জেনারেশন’ নামের এ সাহিত্য আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই সাহিত্যাঙ্গনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। আন্দোলনের বিষয়বস্তু গ্রহণ-বর্জন নিয়ে দুই বাংলার কবিরা বিভাজিত হয়ে পড়েন। হাংরি আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিলো সাহিত্যের প্রচল ধারাকে অতিক্রম করে নবতর ধারা সৃষ্টি। এ মতের অনুসারী কবি-সাহিত্যিকরা তখন মনে করতেন কবিতায় বুর্জোয়া, বিপ্লবী, প্রতিবাদী এর কোনটিই সাহিত্যের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও এ আন্দোলনের কারণে অনেক কবি-সাহিত্যিককে নির্যাতিত হতে হয়। তারপরও আন্দোলনের এ ধারা সাহিত্যাঙ্গনে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। একদিকে নবতর আন্দোলন আর অন্যদিকে জীবনান্দনীয় প্রভাব এ দুধারার মধ্যে আবুল হাসানের কাব্যধারা পৃথকতা নির্দেশনে কতটুকু সফল তা ধারণ করবে মহাকাল। তবে এটুকু বলা অতিশয়োক্তি হবেনা যে, ভাষা সংগ্রামের ক্লেদ, রক্তপাত এবং পরবর্তীতে বিজয়ের আনন্দ এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতিকালীন পরিবেশ কবিরা কাব্য বিনির্মাণের প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেন। পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী থেকে প্রকৃত কবিরা বোধ খুঁজে পান এবং তা প্রকাশ করেন শিল্পঋদ্ধ ভাষায়। কবি আবুল হাসানও এসবের ব্যতিক্রম নন। তার কবিতা পাঠে বাংলাদেশের কাব্য-মানচিত্রে তাকে খুঁজে পাই প্রকৃত শিল্পসত্ত্বার ধারক হিসেবে। তিনি উচ্চারণ করেনÑশিল্প তো নিরাশ্রয় করে না, কাউকে দুঃখ দেয়নাকোনো হীন সিদ্ধান্তের মতোযৌবনের মাংসে তারা রাখেনা কখনোই কোনোঅভাবের কালো ব্যাধি, দূরারোগ্য ক্ষত!
শিল্প তো স্বাতীর বুকে মানবিক হৃৎপি-, তাইআমি তার হৃৎপিন্ডে বয়ে যাই চিরকাল রক্তে আমিশান্তি আর শিল্পের মানুষ!(স্বাতীর সঙ্গে এক সকাল/রাজা যায় রাজা আসে)ত্রিশের প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, ‘হৃদয় খুঁড়ে যে বেদনা জাগাতে ভালবাসেÑ সেই কবি’। সম্ভবত: অগ্রজ কবির ওই বাণীকে শ্বাশত জ্ঞানে হৃদয়ে ধারণ করে কবিতা চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন কবি আবুল হাসান। এ ছাড়া জীবনানন্দের কাব্য ও তার যাপিত জীবন পাঠ এবং বিশেষ করে জীবনানন্দ দাশের ‘ট্রামনিয়তি’ কবি আবুল হাসানের মনে দারুণভাবে রেখাপাত করেছিলো। তিনি নিজের জীবনের সঙ্গে এর সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন বোধ করি। যে কারণে দুঃখকেই তিনি ভালবেসেছিলেন। তার কাব্য পাঠে একজন দুঃখ ভারাক্রান্ত কবি হিসেবে আবিস্কার করি তাকে। কিন্তু কেন এই ব্যক্তিগত দুঃখবোধ? এ প্রশ্নের মিমাংশা একমাত্র কবি-ই করতে পারতেন। তবে আপাত সরল দৃষ্টিতে আমরা তাকে আপাদমস্তক কবি হিসেবেই দেখি। মানুষের প্রতি মমতা ও তীক্ষè শিল্প-সৌন্দর্যের পূজারি হয়েও ব্যক্তিগত দুঃখে জারিত হয়ে তিনি নীরবে সয়ে যান সব ধরণের নাগরিক যন্ত্রণা। নৈঃশব্দের কোলাহল ভেঙে নীরবেই তিনি কাব্যের মুক্তা ফলান। সমৃদ্ধ করেন কাব্যকলা, নিজস্ব শিল্পের ঘর। ‘ঝিনুক নীরবে সহোঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সয়ে যাওভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও!’(ঝিনুক নীরবে সহো/পৃথক পালঙ্ক)কবি আবুল হাসান কাব্যের মুক্তা ফলাতে প্রযত্ম থাকলেও একমাত্র উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেলে তাকে আমরা হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে দেখি। যা পরবর্তীতে তার কবিতায় স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। কবিতা মূল্যায়নের দিক বিবেচনায় রেখে বলা যায়, কবি আবুল হাসানের জীবনবীক্ষা থেকে উৎসারিত নৈরাশ্য কালক্রমে দখল করে নেয় চিন্তার দ্রাঘিমা। যে কারণে আবুল হাসানের কবিতা শিল্পে প্রেম আর অ-প্রেম, জীবন আর মৃত্যু পারস্পরিক দ্যোতনায় একাত্ম হয়ে চোখে পড়ে। মানব জীবনে প্রেমের দোলা আছে বলেই কবিতায় পৌনঃপুনিকভাবে, ঘুরে ঘুরে আসে শ্বাশত সমৃত্যুবোধ। এই মৃত্যুর আঁধারে থেকেই তিনি সন্ধান করেন প্রেমের অধরা-মাধুরী। দৃশ্যত জীবন, মৃত্যু, প্রেম, বিলাপ এবং দুঃখের জীবন্ত ছবি শিল্পীত দীপ্তিতে সমুজ্জ্বল থাকে তার কবিতার পঙ্ক্তিতে। জীবনকে তিনি দেখেছিলেন মৃত্যুর সমান্তরাল তাই, ‘মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবেনা’ এর মতো সফল পঙ্ক্তি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন অনায়াসে। এত কিছুর পরও আবুল হাসানের কবিতার পাঠক হিসেবে প্রশ্নটি সামনে চলে আসে, তিনি কী নিজের সৃষ্টিশীলতা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন? কিংবা তিনি কী বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাকে দিয়ে সাহিত্যের কিছুই হবে না? যদিও তিনি লিখলেন, ‘আমার হবেনা আমি বুঝে গেছি’ অথবা, ‘চলে যাবো দেশ ছেড়ে’র মত কবিতা। সত্যি কী কবি আবুল হাসানের কিছুই হয়নি? হ্যাঁ হয়েছে। আর হয়েছে বলেই তার কবিতা এখন পাঠ্যÑ প্রশংসিত। ‘বেঁচে থাকতে হলে আজ কিছু চাই! কিছুই কি চাই?গেরস্থালী নয়তো শূন্যতা? নয়তো সন্ন্যাস? নয় নীলাঞ্জনশ্যাম নারীনয়তো কিছুই নয়? বসে থেকে বেয়াকুল দিন দেখেদিন কাটানো অলস ভঙ্গিÑ সে ও বেঁচে থাকা নাকি?(এই ভাবে বেঁচে থাকো, এই ভাবে চতুর্দিক/যে তুমি হরণ করো)কবি শামসুর রাহমান ‘আবুল হাসান রচনা সমগ্র’র ভূমিকা লিখতে গিয়ে বলেন, ‘আবুল হাসান মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত কবি, কবি ছাড়া আর কিছুই নন। তার প্রতিটি নিঃশ্বাসে বয়ে গেছে কবিতা। তার এলোমেলো জীবনের ছাপ পড়েছে তার কবিতাতেও। এই এলোমেলোমি তার কবিতার দুর্বলতা এবং শক্তি।’ কবি শামসুর রাহমানের এ কথার সর্বৈব সত্য ধরা পড়ে যখন সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের কবিরা আবুল হাসান পাঠ থেকে কবিতার বোধ খুঁজে নেন এবং তার কবিতার বোধে দৃশ্যমান পলায়নপর মনোবৃত্তিকে সর্বাংশে পাশ কাটিয়ে কবিতা সৃষ্টিতে নিমগ্ন হন। সুতরাং আবুল হাসানের কবিতার দুর্বলতাগুলো ধরা পড়লেও তার কাব্যভাষা এবং কাব্যবোধের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়। আবুল হাসানের উত্তরণের দশক ষাটের দশকের অন্য কবিদের মতো তিনিও আত্মবিশ্লেষণে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। কবিতায় তার আত্মদর্শন অন্যান্য সমসাময়িক কবিদের চেয়ে ভিন্নতর দর্শনের জন্ম দেয়। তিনি তার অভিজ্ঞতা ও বোধের উল্লেফনে উপস্থাপনগত কৌশল আলাদা করতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। এতে কবিতার প্রতি তার গভীর অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ‘এই ভাবে ভ্রমণে যাওয়া ঠিক হয়নি, আমি ভুল করেছিলাম!করাতকলের কাছে কাঠচেরাইয়ের শব্দে জেগেছিল সম্ভোগের পিপাসা!ইস্টিশানে গাড়ির বদলে ফরেস্ট সাহেবের বনবালাকে দেখেবাড়িয়েছিলাম বুকের বনভূমি!আমি কাঠ কাটতে গিয়ে কেটে ফেলেছিলাম আমার জন্মের আঙ্গুল!ঝর্ণার জলের কাছে গিয়ে মনে পড়েছিল শহরে পানির কষ্ট!স্রোতস্বিনী শব্দটি এত চঞ্চল কেন গবেষণায় মেতেছিলাম সারাদিনক্ষুধাতৃষ্ণা ভুলে!’(ভ্রমণ যাত্রা/যে তুমি হরণ করো)আবুল হাসান পাঠে দেখা যায়, যাপিত জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত সৃষ্ট তরল আবেগকে তিনি পরিপূর্ণভাবে সংযত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তার প্রাথমিক পর্যায়ের কবিতাগুলোতে এর প্রভাব তীব্রভাবে দেখা যায়। যদিও পরবর্তীতে তিনি যাবতীয় দীর্ঘশ্বাস, হতাশা আর শিল্পহীন অসারতা থেকে নিজেকে দূরে রেখে জীবনের নানা কৌণিক মেরু থেকে বোধের নির্যাস তুলে এনে কবিতা সৃষ্টিতে সচেষ্ট থেকেছেন। তার দশকের কবিদের ভিড়ে বয়সে অনতিতরুণ কবি আবুল হাসান অনেকটা নির্ভৃতচারী হয়ে পড়েন। নির্জনে কবিতা সৃষ্টি করতে গিয়ে তিনি একদিকে নিসর্গকে চিয়ায়িত করছেন তেমনি বিপরীতমুখী উচ্চারণে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন চিতার জলন্ত অগ্নিকুন্ড। একদিকে তিনি লেখেন, ‘সর্বাঙ্গে সবুজ আমি কোথাও ঘরের দরোজায় দাঁড়ালেই আজো/পোষা পাখিদের কিচিরমিচির শুনি/শিশুদের কলরব শুনি/সুবর্ণ কঙ্কন পরা কামনার হাস্যধ্বনি শুনি!’ আবার লেখেন, প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না/আমি কে ছিলাম, কী ছিলামÑ কেন আমি/সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী/হয়েছি হিরণ দাহ, হয়েছি বিজন ব্যথা, হয়েছি আগুন।’ কবি আবুল হাসানের কাব্য পাঠে বোঝা যায়, তিনি ছিলেন প্রকৃতার্থে একজন বেদনাবাহিত কবি। নিজের ব্যক্তিগত জীবনাচার থেকে তিনি যেসব দুঃখ-যন্ত্রণা, নৈরাশ্য, হতাশা পেয়েছিলেন তা উপজীব্য করে সৃষ্টি করেছেন তার কাব্যভা-ার। জীবনের পৌনপুনিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন শব্দের পেলবতায়। এক সময় জীবন তার কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। তিনি মুক্তি পেতে চান জীবন থেকে। নিজের কষ্টের কথা তিনি অবলীলায় উচ্চারণ করেনÑ‘আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগেরাত্রি বেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে’(আমি অনেক কষ্টে আছি/যে তুমি হরণ করো)কবি আবুল হাসানের কাব্যসাধনা এক দশক সময়কাল হলেও এই স্বল্পসময়ের কাব্য সাধনায় তিনি গভীর জীবনবোধ ধারণ করতে সক্ষম হন। তার সমাজচেতনা, স্বদেশ ভাবনা, নিসর্গচিন্তা ক্রমশ বিশ্ববীক্ষায় ছড়িয়ে পড়ে। রাজনীতি সচেতন এই কবির কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে বিচ্ছিন্নভাবে মৃত্যুযন্ত্রণা উঠে এলেও পৃথকভাবে কবিতার ধ্বনি চেতনা এবং আত্মশুদ্ধিমূলক উচ্চারণ তার কবিতাকে অবিশ্বাস্য রকমের উচ্চতায় পেঁৗঁছে দেয়। কবিতায় জীবনের কাক্সক্ষা ও শুভাশুভের নান্দনিক বিশ্লেষণে তিনি ব্রতী হন। একদিকে মঙ্গলচেতনা এবং অন্যদিকে বিষাদময় যন্ত্রণা তিনি উপস্থাপন করেন অপূর্ব শিল্পদৃষ্টিতে। ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘পৃথক পালঙ্ক’ পাঠে আমরা একজন সফল, পরিপূর্ণ কবি আবুল হাসানকে দেখতে পাই। এ কাব্যগ্রন্থ পাঠে কবি আবুল হাসানকে উপলব্ধি করতে কষ্ট করতে হয়না, বেগ পেতে হয়না তার কাব্যভাষা উদ্ধারে। এ গ্রন্থে এসে তিনি ক্রমাগত ভাঙনে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রন্থের যাবতীয় সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে পৃথক পালঙ্কে সমাসীন হয়ে যান। নিজস্ব দশকে নিজস্ব পৃথক অভিধায় ভূষিত হন। খ্যাতি পান ‘কবিতার যুবরাজ’ হিসেবে। ‘পাতাকুড়োনীর মেয়ে তুমি কী কুড়াচ্ছো? ছায়া আমি ছায়া কুড়োই!পাখির ডানায় সিক্ত সবুজ গাছের ছায়া, গভীর ছায়া, একলা মেঘেকুড়োই, হাঁটি মেঘের পাশে মেঘের ছায়াÑ ছায়া কুড়োই!
পাতাকুড়োনীর মেয়ে তুমি কী কুড়োচ্ছো? পাতা, আমি পাতা কুড়োই!কয়টি মেয়ে ঝরাপাতা : ঝরছে কবে শহরতলায়,শিরায় তাদের সূক্ষ্ম বালু,পদদলিত হুদয় ক’টি, বৃক্ষবিহীন ঝরাপাতাÑকুড়োই আমি তাদের কুড়োই!’(ধরিত্রী/পৃথক পালঙ্ক)সারাজীবন অতৃপ্তির রক্তক্ষরণে বসবাস করেও কবি আবুল হাসান বাংলা সাহিত্য ভা-ার পূর্ণ করেছেন ‘ধরিত্রী’র মত অনবদ্য অনেক কবিতা দিয়ে। সামগ্রিক কবিতা বিচারে কাব্যবোদ্ধাদের কাছে হয়তো কবি আবুল হাসান ‘ভাবালুতা’ ও ‘জীবনানন্দ দাশ’ প্রভাবিত। কিন্তু অপ্রাপ্তির তীব্র দহন, দুঃখবোধে জারিত হলেও সবকিছু অতিক্রম করে তার পরিচয় একটিইÑ তিনি প্রকৃত শিল্পস্রষ্টা, আপাদমস্তক একজন প্রকৃত কবি। কালপরিক্রমণে তার কবিতার জয়রথ মহাকালে ধাবমান। তার কবিতার পঠন পাঠন এবং কাব্যবোধ অন্বেষণে বর্তমান প্রজন্মের কবিকুল যখন তার দ্বারস্থ হন তখন বোঝা যায় আবুল হাসানের কবিতা সর্বজনীন, মানোত্তীর্ণÑ কালোত্তীর্ণ। আজ একথা অনস্বীকার্য যে, কবি আবুল হাসান এমনই এক শিল্পসত্ত্বার ধারক যার কবিতা পাঠে পাঠকচিত্তে সঞ্চারিত হয় দহনের তীব্র ঝঙ্কার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন