চে-গুয়েভারার বাইসাইকেলের কথা বিশ্বের সবাই জানে। সম্প্রতি অনলাইনেও চে’র পরিচয় সুলভ। কিউবান বিপ্লবের অন্যতম এই মহানায়কের জীবন কাল ১৯২৮ থেকে ১৯৬৭ সাল। ইদানীং তার নামে অকথ্যও লেখা হয়, সার্চ দিলে পাওয়া যায়। আবার আর্জেন্টিনার শ্রেষ্ঠ কবিদের নামের তালিকায়ও তার নাম চোখে পড়ে।
চে যখন বারো বছরের পিচ্চি, বাইসাইকেল চালান, সারাবিশ্ব ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। বিশ্বের সব মেহনতি মানুষের সুখ-দুঃখ স্বচক্ষে দেখার ইচ্ছা লালন করছেন মনে। তখন ঢাকার রাজপথে এক কমিউনিস্ট যুবক সাইকেল চালিয়ে দাঙ্গাপীড়িত অঞ্চলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতেন। ঢাকায় তখন লাহোর প্রস্তাব পরবর্তী ‘আল্লাহু আকবর’ আর ‘বন্দে মাতরম্’ এর লড়াইয়ের যুগ। আমাদের এই বাইসাইকেল চালকের নাম অশোক। সে একটি গল্পের নায়ক। গল্প থেকে টেনে বের করে এনে যদি তার ছবিটা ইতিহাসে প্রতিস্থাপন করি তবে নামটা পাল্টে দিলেই চলবে। তার নাম হবে সোমেন চন্দ। জীবনকাল: ১৯২০ থেকে ১৯৪২ সাল। অশোক আসলে সোমেন চন্দের বিখ্যাত ‘দাঙ্গা’ গল্পের ক্যানভাসে আঁকা আত্মপ্রতিকৃতি। সোমেন নিজেই অশোকের মতো সাইকেল চালিয়ে ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে পীড়িত, বঞ্চিত মানুষদের খোঁজ-খবর নিতেন।
চে’র হত্যাকা-ের চার দশক পরেও শত্রুরা বিভিন্ন বই-পুস্তকে, ওয়েবসাইটে তাকে মার্কিন পুঁজিবাদীরা ‘কিলিং মেশিন’, ‘সোভিয়েত দালাল’, জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে ছোট করার চেষ্টা করে থাকে। তেমনি আমাদের সোমেন চন্দের হত্যাকা-ের সাত দশক পেরিয়ে যাবার পরেও দেখি শত্রুরা সক্রিয় আছে। আমরা দেখেছি বিগত কয়েক বছরে দেশে জাতীয় ফল কাঁঠাল যতগুলো না ফলেছে তার চেয়ে বেশি ফলেছ আর্জেস গ্রেনেড আর বোমা। হাটে-মাঠে, বাজারে-মাজারে, ওরসে-গির্জায়, মিটিংয়ে-জলসায়, মেলায়-সিনেমায় কোনখানে আমরা বোমা-গ্রেনেড বিস্ফোরিত হতে না দেখেছি? আদালতেও বোমা বিস্ফোরণ দেখেছি সেই জাতীয়তাবাদী শক্তির যুগে।
আমাদের আলোচিত তরুণ কথা-সাহিত্যিক সোমেন চন্দকে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা ঢাকার রাজপথে ছুরির আঘাতে হত্যা করেছে ৮ মার্চ ১৯৪২ সালে। বহু বছর পরে হুমায়ুন আজাদকেও ঢাকার রাজপথে রক্তাক্ত করেছে ধর্মান্ধ আর উগ্র জাতীয়তাবাদীরা। সময়ের বিবর্তনে ছুরি বড় হয়ে রূপ নিয়েছে চাপাতির। আর সাহসী হয়ে কোপ বসিয়েছে বয়সে প্রবীণ, মেধায় অতুল, কর্ম অভিজ্ঞ ও বিচিত্রধর্মী সৃষ্টিশীল একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের গলায়। এবং তা তারই প্রিয় প্রতিষ্ঠানের এলাকার মধ্যে। সোমেন চন্দের হত্যাকা-ের দৃশ্যটি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘দাঙ্গা’ গল্পের প্রথমেই ছুরির আঘাতে হত্যাকা-ের বর্ণনার মধ্য দিয়ে। গল্পের অশোকের ছোটভাই অজয় যখন হিন্দু -মুসলমানের মিলনের ইস্তাহারগুলো পুড়িয়ে ফেলে, ভাইয়ের আদর্শের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তখন আমরা বুঝি এই অজয়েরা এখনও সমাজে অপশক্তি হিসেবে অজেয়।
সোমেন চন্দ ইংরেজ কবি জন কীটসের মতো স্বল্পায়ু হলেও মাত্র বাইশ বছর বয়সে যা লিখেছেন তা কৈশোরক হিসেবে উপেক্ষা করার নয়। আঠারো বছর বয়সে তিনি ব্যক্তিগত এক চিঠিতে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এতে বোঝা যায়, তার জ্ঞানের গভীরতা কতখানি ছিল। পড়লেই বোঝা যায় বিষয়টি কাকতালীয় নয়, বরং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার নিদর্শন। সোমেন সমসাময়িক বিশ্বসাহিত্যের মনোযোগী পাঠক ছিলেন। শুধু সাহিত্য নয়, সমালোচনা পাঠেও কৌতূহলী ছিলেন। জর্জ বার্নাড শ, জোসেফ মাজিনি, এবং র্যালফ ফক্সের তাত্ত্বিক বইও তাকে পড়তে দেখি তার চিঠিপত্রে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য নিয়ে অনেক প্রশংসা করেছেন কিন্তু তার পড়াশোনার ঘাটতির দিকটাও ধরতে পেরেছেন।
অল্প দিনের জীবনে সোমেনকে অনেক কাজ করতে হয়েছে। লেখালেখি, রাজনৈতিক সংগঠন চালনা, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, রেলওয়ে শ্রমিকদের দেখাশোনা এবং তাদের সংগঠিত করা, বেতারে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান উপস্থাপন, ‘প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘে’র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা, ‘ক্রান্তি’ নামের সাহিত্য সংকলন প্রকাশনার কাজ করা ইত্যাদি। সোমেন মাত্র বিশ বছর বয়সে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন।
সোমেন চন্দ মাত্র ছাব্বিশটি গল্প, একটি অসমাপ্ত উপন্যাস, তিনটি কবিতা, ও দু’টি নাটিকা রচনা করেছেন। এটুকুতেই তিনি বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী নাম। তাঁর বিখ্যাত গল্প ‘ইঁদুর’ অশোক মিত্রের এবং ‘সংকেত’ লীলা রায়ের অনুবাদে ইংরেজি হয়ে বিশ্বপাঠকের হাতে গিয়েছে। জীবিত অবস্থায় সোমেনের কোনও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ঢাকায় আততায়ীর ছুরির আঘাতে নিহত হওয়ার পরে ডিসেম্বর মাসে কলকাতার প্রতিরোধ পাবলিশার্স থেকে প্রথম বেরোয় সংকেত ও অন্যান্য নামে গল্প গ্রন্থ। এতে স্থান পায় ছয়টি গল্প। ‘রাত্রিশেষ’, ‘স্বপ্ন’, ‘একটি রাত’, ‘সংকেত’, ‘দাঙ্গা’ এবং ‘ইঁদুর’।
দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘বনস্পতি’ প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে পরের বছর ডিসেম্বরে। এতে আছে এগারোটি গল্প। ‘মরূদ্যান’, ‘ভালো না লাগার শেষ’, ‘অমিল’, ‘সত্যবতীর বিদায়’, ‘সিগারেট’, ‘গান’, ‘প্রত্যাবর্তন’, ‘অকল্পিত’, ‘মহাপ্রয়াণ’, ‘প্রান্তর’ এবং ‘বনস্পতি’। উভয়গ্রন্থের গল্পেই সাধু এবং চলতি ভাষায় লেখা গল্প স্থান পেয়েছে।
অগ্রন্থিত গল্পগুলো ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। একমাত্র উপন্যাস ‘বন্যা’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় নির্মলকুমার ঘোষ সম্পাদিত ‘বালীগঞ্জ’ পত্রিকায়। চিঠিপত্রে জানা যায় এটি তিন খ-ে শতাধিক পৃষ্ঠায় পূর্ণাঙ্গ হতো। দ্বিতীয় খ- পর্যন্ত লেখা হয়েছে, তবে সে খ-টি হারিয়ে যাওয়ায় উপন্যাসটির প্রথম খ-টিই গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে।
দুটি একাঙ্কিকা ‘বিপ্লব’ এবং ‘প্রস্তাবনা’ দুটিই ঢাকার মাসিক ‘শান্তি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। তিনটি কবিতাও সংকলনে স্থান পেয়েছে, ‘রাজপথ’, ‘জনশক্তি’ আর ‘শুভদিনের সংবাদ শোন’। প্রথম কবিতাটিতে নিজের কথা আছে, পরের দুটি সুকান্তধর্মী।
সোমেন চন্দ অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ঢাকা কেন্দ্রের নিয়মিত আলোচক ছিলেন। এখানে তিনি অনেক কথিকা পাঠ করেছেন। সেসব পা-ুলিপি এখনও অনাবি®কৃত রয়ে গেছে।
প্রগতি লেখক সংঘের ফ্যাসিবাদবিরোধী এই অতি তরুণ বিপ্লবী কথাসাহিত্যিক রাজনৈতিক কর্মকা-ও বেশ দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্বশীলভাবেই পালন করেন। এ সংগঠনের ঢাকা শাখার সভাপতি ছিলেন রণেশ দাশগুপ্ত। সোমেন চন্দ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রগতি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হয়। সংগঠনের সাহিত্য সংকলন ‘ক্রান্তি’ সম্পাদনা করতে হয়। প্রকাশনার ভারও তার ওপর। এ ছাড়া ঢাকার রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নেরও তিনি নেতৃত্ব দেন। সব মিলিয়ে ছোট জীবনে অনেক কাজ।
The King Casino - Atlantic City, NJ | Jancasino
উত্তরমুছুনCome on in the King Casino for 메이피로출장마사지 fun, https://jancasino.com/review/merit-casino/ no wagering requirements, delicious dining, and enjoyable casino gaming 바카라 사이트 all at wooricasinos.info the heart of Atlantic City. herzamanindir.com/