এই সময়ের প্রেক্ষিতে প্রশ্নটা তুলতেছি।এখন আমরা কি দেখছি? নতুন কিছু কি দেখছি? না, নতুন কিছু না। দেখছি বাংলাদেশের রাজনীতির গণবিরুধী চরিত্রের নিত্যনতুন তালের ধারাবাহিকতা। এই তাল বা বেতাল মাতলামির পর্যায়ে চলে গেছে এখন। কিন্তু এতেও কি আমরা অবাক হয়েছি? না অবাক হওয়ার মত ঘটনা এখনও ঘটেনি। ‘পিন্দনে নাই ত্যানা নাম তার রাজকুমারী’ -এই আমাদের অবস্থা। বাংলাদেশের রাজনীতির ফ্যাসিবাদির রুপান্তরের কথা আমরা আগেই বলেছি। কিন্তু এই ফ্যাসিবাদের ধরণ-ধারণ নিয়া বিস্তারিত আলাপ এখনও উঠেনি। সেই কাজ অতি জরুরী বলাই বাহুল্য। কিন্তু এখন যে সব বিলবোর্ড থেকে ‘সুন্দরী’ (নারী-পুরুষ) দের হটিয়ে শেখ হাসিনা নিজের দখল নিলেন তার মাজেজা কি? কেউ কেউ বলছেন, এটা সরকারের গণবিচ্ছিন্নতার নজির।কথাটা প্রতিপক্ষের প্রতি প্র্রতিযোগিতামূলক ভাবে বলা হলেও এর সত্যাত্য অস্বিকার করার জো নাই! বিজ্ঞাপনী সংস্কৃতির ধারক বাহক এবং এর উৎপাদনকারী নি:সন্দেহে সমাজের ক্ষমতা শ্রেণীর নিকটবর্তী অল্পকিছু মানুষ। এর প্রভাবও তড়িঘড়ি করে পড়ে মধ্যবিত্তের মধ্যেই। এর বাইরেও যে বিশাল জনগোষ্ঠি আছে তাদের প্রভাবিত করার যে কাগুজে চেষ্টা তা বরাবরই ব্যার্থ হয়। কেন না প্রচারেই সব মুশকিল আসান হয়ে যায় না। বিরুধীতা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়। তখন প্রচার দিয়ে হয় না, শুরু হয় রাষ্ট্রী গণহত্যা। যা হোক বিলবোর্ড কালচারের প্রবর্তনকে কর্পরেট ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতির একটা নিকৃষ্টি ধরণ আকারেই দেখতে হবে।বালাই বাহুল্য এই বিজ্ঞাপনী সংস্কৃতি বাংলাদেশকে গিলে খায় নি। বিলবোর্ড বা চটকদার উন্নয়নের রেটরিক বাংলাদেশের জনগনের মনে এখন আর দ্বিধা তৈরির সুযোগ নিতে পারবে বলে মনে হয় না। তার পরেও এর প্রভাব জনগণের উপর যে একদম পড়বে না তা বলা ঠিক হবে না। কারণ জণগণ হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকরা যে রাজনৈতিক ভাবে একটা জনগোষ্ঠি হিসেবে গড়ে ওঠতে পারেনি তার নজির ঘরে-বাইরে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে আছে। এই অবস্থায় রেটরিকই বিদ্যা বলে চালু হয়, গণবিরুধীতা হয় বুদ্ধিজিবিতার শর্ত। গণতন্ত্র মানে হয় ভোট।ক্ষমতা মানে সিংহাসনে আসিন হওয়া। এই ক্ষমতা দখল নিয়া নির্বাচনের আগে রক্তারক্তিও এখন রেগুলার রুটিনেরই অংশ। এবার অবশ্য অনেক আগেই খুনের সংস্কৃতি জোরদার ভাবে চালু হয়েছে। নিজ দলের ক্যাডার বা তথকথিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মারফত বড় দুই দলই রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কমবেশি খুনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে । কেউ কেউ এটাকে পাকাপাকি করতে চায় জনসেবার বরাত দিয়ে।এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে আমারদের জন্য জরুরী হচ্ছে ‘জনগন’ ডাকনামের প্রপঞ্চ নিয়ে আলাপ উঠানো । এখানে সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য। তবে বিশদ ভাবে নয়। চলতি চালে কিছু কথা তুলে রাখাই এই লেখার উদ্দেশ্য।
জনগণের তরফে বর্তমানে দায়টা কি? প্রশ্নটা সরল ভাবে ঠেলে দিলেও উত্তরটা সোজা ভাবে ঠোঁটের ডগায় চলে আসবার নয়। কেননা প্রশ্নটার সাথে ঐতিহাসিতকার মানে ইতিহাস নির্মানের ফয়সালা রফা করবার ব্যাপার আছে। অর্থাৎ জনগণ এই মুহূর্তে যে দায়টা ফিল করছে তা পালনের মাধ্যমে এই সময়ের প্রতিবন্ধকতা উৎরে যাবার কর্তব্য-কর্ম আছে। প্রশ্নটা আরও গোড়াতেই গুছিয়ে করা যায় জনগণের দায় বলতে কি কিছু এই কালে আছে? যেই খানে জনগণ কথাটাই ভীষণ গোলমেলে! সব দল তো বটেই এম এল এম প্রতিষ্ঠানও জনগণের নামেই সব কিছু করে। ফলে জনগণ ব্যপারটা কেবল মাত্র সংখ্যার মামলা নয়। দেখা যাচ্ছে এর সাথে নানা মহলের স্বার্থ প্রায় সরাসরিই যুক্ত রয়েছে। তাই এরা নিজেদের স্বার্থে সবসময়ই জনগণের দায়টা নিজেদের কাধে নিয়ে থাকে । ফলে তাদের কাছে জনগণ মানে পার্টী -জন। মানে আমার লোক । আমার যাতে ভাল আমার লোকেরও তাতে ভাল এই হল সরল হিসেব। এই সরল হিসেবে সে শুরু করে গুয়ার্তুমির রাজনীতি। জন্ম হয় ফ্যাসিবাদের। শহুরে কিছু লোক, আদতে মধ্যবিত্ত নানা নাম ধেয় চেতনার নামে উস্কে দেয় ফ্যাসিবাদের সংস্কৃতি। বেগবান হয় কালচারাল ফ্যাসিবাদ।এর মধ্যে আসলে বাদ থাকল যার ডাক নামে এত কিছু সেই ‘জনগণই’, এর যদি সাম্প্রতিক তম উদাহরণ দেই তাইলে ‘গুম’ নিয়া যে রাজনীতি হল তার কথা বলা দরকার। এইটা নিয়া ইতি মধ্যে আপনারা নানা কথা শুনেছেন। নতুর করে যা বলবার আছে তা হল, এই ঘটণা আমাদের সামনে এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, নিজেদের ‘জনগণ’ অর্থৎ রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি আকারে গড়ে উঠবার জন্য। কিন্তু তা হয় নি। এক দিকে বিএনপি যেমন শুধু ইলিয়াস কে চাই নইলে হেন করব তেন করব অন্য দিকে আওয়ামীলীগ যথারীতি তার ফ্যাসিস্ট ভূমিকাতেই ছিল। ইলিয়াস ছাড়াও আরও প্রায় একশ লোক ( এনজিও তথ্য) নিখোঁজ হয়েছে। তাদের মধ্যে অখ্যাত লোকই বেশী। দুই-চারজন একটু বেশী খ্যাত মানে আম পাবলিকের বাইরে। বিএনপি এই আন্দোলনকে জনগণের আন্দোলন তো দূরের কথা মানবাধিকার আন্দোলন হিসেবেও দাঁড় করাতে পারে নি। কেন পারেনি ? তারা মনে করে ইলিয়াস আলী যেমন জনগণ অন্যরা তেমন জনগণ নয়! এছাড়া আর কোন কারণ আছে কি? যদি না থাকে তাইলে তো এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন হওয়ার কথা । কিন্তু কার্যত এইটা পার্টিজন আন্দোলন হল। ফলে জনগণ হরতাল নিয়া বিরক্ত হল, কষ্ট করলো, সরকারের ‘গুম’ নিয়া ঘুমন্ত ভুমিকায় ভয়ে মধ্যবিত্ত আতঙ্কিত হল। তারপর যখন দেখল সে তো আর ‘গুম’ হয়ে যাচ্ছে না তখন আবার ঘর-গেরস্তালি শুরু করে দিল। আর পথে ঘটে প্রায় হাক ছাড়ল কেউ জনগণের কথা চিন্তা করে না । দেশটার আর কোন সম্ভাবনা রইল না ইত্যাদি.. এই হল জনগণের হালত।
তথাপি-বাংলাদেশে রাজনীতি থেকে সমাজে- এমনকি উন্নয়ন ব্যবসায়ও জনগণ বারবার বলির মাল। এত কাল ধরে এই খেইল চলতেছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে জনগণ তার ‘জনগণ’ হওয়ার শর্তপূরণ করতে পারে নাই বলে । ফলে সে আসলে পরিনত হয়েছে তুচ্ছ অঙ্কের সংখ্যায় মাত্র । সংখ্যার বেড়া টপকে আমরা যদি রাষ্ট্রের নাগরিক আকারে নিজেদের হাজিরা নিশ্চিত করতে পারতাম তাইলে খুব সহজেই সংখ্যার মাইর-প্যাচে পড়ে নিজেদের আম পাবলিক হওয়ার কাল চক্র থেকে রক্ষা করতে পারতাম।
আরও একটি ভয়ংকর প্রবণতা আমাদের মধ্যে পয়দা হয়েছে তা হল, জনগনের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বিশ্বাসের বা ধর্ম অনুযায়ী বিভাজনকে উস্কে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন দেশে এখন রাজনীতি হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বনাম বিপক্ষের শক্তি। কাজেই যুদ্ধকে নিজেদের দখলে নিতে শুরু হয় অকল্পনীয় নষ্টামী। রাষ্ট্র গঠনের বুনিয়াদি কাজের দিকে বিতর্ককে ধাবিত করবার বদলে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতীশীলতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদির পক্ষে বিপক্ষে ভাগ করে জাড়ি রাখা হয়েছে এক কৌতুকাতীত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির মধ্যে পয়দা হচ্ছে এমন এক জেনারেশন যার পা বাংলাদেশে কলিজা সহ মাথাটা (চিন্তা অর্থ-এ) মার্কীন মুল্লুকে। বাংলার ডিজুস পুলাপাইন এরা। রাজনীতি এদের কাছে গানবাজনা, লাফালাফি বা বাহারি পট্টি বাইন্ধা স্ব-বান্ধব হল্রা করা। বলাই বাহুল্য এর ফলে রাজনৈতিক পরির্বতন কথাটা মূল্য হারিয়েছে। পয়দা হয়েছে প্রবল কনজিওমার জেনারেশন। এরা ইউনিলিভারের ক্রেতা হতে পারাকেই আগ্রগতি মনে করে। আবার এরাই নিজেদের জনগণ বলে ক্লেইম করে।এর বাইরে যেন আর কেউ নেই। যারা ম্যাগি মুডুলস খায়না, যারা মাদ্রাসায় পড়ে, যারা বরগা চাষ করে, যারা কলে কাজ করে, যারা গায়ের বল/শক্তি বেচে পেট চালায় তাঁরা যেন কেউ না। তাঁরা কেবলই সংথ্যা মাত্র।
আমরা জনগনের দায় বলতে কি বুঝব? আসলে কি কিছু বুঝবার সুযোগ আছে। কথাটার একটা হাম্বড়া ভাব আছে সত্যি কিন্তু ওতে কিছু পরিস্কার হয় না। কেন না জনগণ কথাটার মধ্যে যে সমবায়িকতার শর্ত নিহিত রয়েছে আমরা প্রায়ই তার ব্যাপারে ওকিবহাল থাকি না। শুধু সমবায়িকতার শর্ত বললে পুরাটা বলা হল না। এর মধ্যে নিশ্চয়ই একটা কর্তাসত্তা (কর্তাগিরি বা মাসকুলিনিটি না) সরাসরিই হাজির আছে। ফলে প্রশ্নটা কিন্তু আর সরল থাকছে না। এখন জনগণ যদি তার ‘জনগণ’ ডাকনামের রাজনীতির ভেদ না ভাঙ্গতে পারে তাইলে কি ভাবে তার সমবায়িক দায়ের প্রশ্নটা সাফ সাফ হাজির করবে? জনগণ বলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের লেবেলিং করে নির্যাতনের গ্যারান্টিই আদায় করে নেয়। ‘জনগন’ কে নাগরিক ভাববার মত রাজনৈতিক সরকার তখা রাষ্ট্র কাঠামো আমারা গড়ে তুলিনি। কাজেই এই জনগন এখনও পরিগঠিত রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হয়ে ওঠে নি। নিজের সার্বভৌম ক্ষমতা এখনও কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানির লাশ হয়ে। ফলে এই অবস্থায় জনগনের নামে সরকার ব্যাবস্থার মধ্যে উন্নয়নের নামে যেটা জাড়ি আছে তা কয়েকটি পরিবারের লোটপাটের সুযোগ ছাড়া আর কি। মনে রাখতে হবে, লুটপাটের অর্থনীতি জাড়ি রাইখা উন্নয়নের ঢঙ্কা বাজানো নাগরিকদের সাথে পরিহাস ছাড়া আর কিছু না। এখন যারা রাস্তা বা ব্রিজ দেখে উন্নয়ণ হয়েছে বলে প্রচার চালান তাদের র্দুমূর্খ ছাড়া আর কি বলা যাবে? এই অবস্থায় জনগন বলে তো কোন কিছু দাঁড়ায় নাই।তাইলে আমরা কিসের কথা বলি? কিসের ট-শো গিরি? এই অবস্থায় কোন জনগোষ্ঠীই রাজনৈতিক হতে পারে না। প্রচারে কিছু যায় আসে না। মুখের কথায় চিড়া ভিজলে নদীর দেশে পানির জন্য মিছিল বের হতো না। রটনার রটিয়ে কোন জনগোষ্ঠিকে দীর্ঘ দিন প্রতারিত করা যায় না।রাজনীতি তো পরের কথা! পোস্ট মর্ডান ওয়ালারা হয়তো বলবেন সবই রিপ্রেজেন্টেশনের মাজেজা। কেন না এর মাধ্যমেই আইডিওলজি থেকে শুরু করে নানা রকম ইমেজ তৈয়ার করা হয়। এই সব তর্কে পন্ডিতদের কি লাভ হবে বলা যাচ্ছে না তবে আম পাবলিকের যে কানা -করি কাজে আসবে না তাতে কোন সন্দেহ দেখি না। কেন না আমরা যেই অর্থে জনগণের দায় কথাটা বুঝতে চাইছি তার একটা ব্যবহারিক রাজনৈতিক দিক আছে।
কোন কিছুকে চিহ্নিত করা, মানে এড্রেস করারও একটা রাজনৈতিক নিশানা আছে। ফলে জনগণ কে যখন‘জনগণ’ বলে চিহ্নিত করা হয় তখন সিগনিফাই আর সিগনিফায়ার এর রাজনীতি চলে পুরাদমে- বলবেন পোস্ট মর্ডান বিদ্যাজীবিরা। কিন্তু মামলাটা খালি শুকনা পন্ডিতির না। ব্যবহারিক রাজনীতির দিক থিকা আরও জটিল। মানুষকে কেন জনগণ হতে হয় এই প্রশ্ন করলে আমরা এর ফয়সালার সদর রাস্তার হদিস পাইতে পারি। এই লেখার মধ্যমে সংক্ষেপে আমরা হয়তো সব খোজা খোজির ফয়সালার এসপার ওসপার করেফেলতে পারব না। তথাপি প্রশ্নটা তোলা থাকবে বলে আপনাদের সাথে আলোচনায় সামিল হয়েছি। মানুষকে জনগণ হতে হয়! এই ব্যাপারটা কিন্তু ইন্টারেস্টিং, মানুষ যদি বিশেষ বা সামান্য হয় তাইলে ‘জনগণ’ হওয়ার মধ্যদিয়া সে/তারা সামান্যকরণের বিশেষ-রুপ নির্মান করে। অর্থৎ মানুষ বললে যেমন বিশেষ এবং সামান্য- মানুষ, দুইটাই বোঝার সুযোগ আছে। তেমনি এই মানুষ যখন তাদেরকে ‘জনগণ’ বলে নির্নিত করে তখন আসলে সমষ্টির যে সামান্যকরণ আছে তার থেকে সে উত্তীর্ণ হয় বিশেষে আর এই বিশেষ এমনি বিশেষ যার মধ্যে সমবায়িক চৌতন্য মুখ্য হইয়া ধরা পড়ে। সেই দিক থেকেই সমবায়িক কর্তাসত্তার উত্থান কথাটা তাৎপর্যপূর্ণ। এই সাবায়িক উত্থান আবার কোন ভাবেই উগ্রজাতীয়তাবাদি দিক থেকে বিচার করলে হবে না। এর চিন্তাগত আছড় গ্লোবালাইজ কালে যে কোন ভূগোলের সীমা ছাড়া যাবে। যেতে বাধ্য। ফলে আমাদের পরিগঠিত হওয়ার সাথে বিশ্বইতিহাসের ধারবাহিকতায় নিজেদের হাজির করবার অতি গুরুত্বপূর্ণ দিকটাও খেয়ালে রাখা লাগবে।কমিউনাল জাতি বা জনগোষ্ঠিগত জায়গাটাও আমারা অতিক্রম করে যেতে পারব এই পথেই। আত্নমর্যাদার প্রশ্নটা এখানেই এসে যায়। এই আত্ন কোন ভাবেই বিশেষ জাতীয়তায় সীমাবন্ধ নয়। সে বিশ্ব ইতিহাসের জিবন্ত প্রাণেরই অংশ।এই প্রসঙ্গে এখানে আপাদত এতটুকুই ।
তাইলে আমরা দেখলাম মানষকে জনগণ হইতে হয়? দেখা যাচ্ছে মানুষ ‘জনগণ’ হয়ে ওঠার মধ্যদিয়া রাজনৈতিক ভাবে তার বিশেষ আকারে পরিগঠন হওয়ার একটা দায় বা¯কর্তব্যের ইঙ্গিত দিয়ে রাখছে। তাইলে আমরা একটু আগে দুটা পয়েন্ট পার করে আসছি। একটা হল, কর্তা সত্তা আর একটা- সমবায়িকতার শর্ত। আমরা এইখানে আবার ফিরব। তার আগে আমরা যদি জনগণ ধারণার চলতি হিসাব- নিকাশটা তালাশ করি তাইলে আলোচনাটার একটা ব্যবহারিক প্রয়োজন দাঁড়াইলেও দাঁড়াইতে পারে।
জনগণ বরতে আমরা আম পাবালিকে বুঝে থাকি! কিন্তু আম বললে পুরা জনগোষ্ঠিকে কিন্তু আমরা বুঝাই না। তাদেরকেই বুঝে থাকি যারা অনেকটা গো-বেচারা টাইপের মানুষ। রাজনীতিবিদ- পাতি নেতা নামজাদা পরিবারের সাজুগুজো পুত্র/কন্যা কিন্তু আম পাবলিক না। তবে শহর অঞ্চলের মহল্যায় ভাড়াটিয়ারা অনেক সময়ই আম পাবলিকের কাতারে পড়ে যান। আর গ্রামে হলে যিনি পরের জমিতে কামলা খাটেন তিনি আম তো বটেই জমির মালিকের চোখে অধম বৈ তো নয়। যা হোক এই সব সামাজিক বিবেচনার মাপকাঠি ক্যামনে গড়ে উঠল কবে থেকে এর যাত্রা শুরু? এই সব প্রশ্ন সাল তারিখ ধরে না আলোচা করা গেলেও এই সবের একটা ঐতিহাসিক ইনকুয়ারি অসম্ভব নয় বলেই মনে হয়। এইখানে সেই সুযোগ নাই, তা যা বলছিলাম, একটু খেয়াল করে যদি তাকান যায় দেখা যাবে এইসকল বিবেচনা কতই না হাস্যকর।
পাবলিক ভাল থাকার লাইগা চিল্লা-ফাল্লা করে। বাসে- রেস্টুরেন্টে মারামারির উপক্রম হয় প্রায়ই। তাই বিভিন্ন স্থানে লেখা থাকে‘রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ’- ইহা (রাজনীতি) যেন কোন নিষিদ্ধ জায়গার কারবার..? তো যেই ধরণের বুঝ থেকে এইসব নীত বাণী বা নসিহত দেয়া হয় তার বুঝটাও আম বুঝ। এখন বুঝেন রাজনৈতিক ভাবে এই আম কত পচা। কিন্তু আশার কথা হল- ‘আম পচা দুধে ভাসে আর কাঁঠাল পঁচা গাঙ্গে’ অর্থৎ পচা আমও নাকি দুধে খাওয়ার অনুপযুক্ত হয় না- মুরুব্বিরা কয়।
এখন এই আম জনতা বা পাবলিক ক্যামন আছে?-এই প্রশ্ন উন্নয়ণ বাণিজ্যের জন্য না তুলে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে যদি তুলা হয়। তাইলে উত্তটা কিন্তু এত কঠিন হওয়ার কথা না। উত্তর হইল এর সব-সময় যেমন থাকে তেমন আছে । তারমানে এরা সব সময় একই রকম থাকে আর কি ! কিন্তু সময় তো সব সময় একই রকম থাকে না । তাইলে আম পাবলিক একই রকম থাকে ক্যামনে? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনগণের জন্য সময় সব সময় একই রকম বলেছিলেন কথা সাহিত্যিক শহীদুল জহির (রনির সাথে শেষ সাক্ষাৎকারে ঐতিহ্য-২০১২ ইং।) কথাটা খাঁটি সন্দেহ নাই। কারণ জনগন তো সব সমযই দৌড়ের মধ্যেই আছে। ‘দৌড়’ ব্যাপাটা তো এমন এক চলমানতা দ্বারা নির্নিত যে, তার মধ্যে আগে পরের ব্যাপার থাকলেও ভাল মন্দের ব্যাপারটা সেই ভাবে খেয়াল করার সুযোগ নাই। দৌড়ে কেউ আগে কেউ পিছে এই যা। তার পরেও আমরা যদি প্রশ্ন করি বাংলাদেশের মানুষ মানে আম পাবলিক আসলে ক্যমন আছে? প্রশ্নটা কি কিছু বুঝবার সুযোগ তৈরি করে? না, একদম না। কারণ এই আমের মধ্যেও ক্যাটাগরি আছে আমি মার্কসের ক্লাসের দিকে যাচ্ছি না। ক্লাস আলোচনাটা এখন আর সাবেকি বামপন্থি জায়গায় নাই। ফলে সেই বিষয়ে বিস্তর বয়ান দেবার সুযোগ অন্য জায়গায় নেয়া যাবে। তো ক্যাটাগরি আমরা যদি এই সরকারের এক বিশাল নেতার একটা ঘটনা দিয়া বুঝেতে চেষ্টা করি তাইলে অনেক সহজে বিষয়টা ধরা যাবে। সুরন্জীত সেন গুপ্তের এপিএস কি আম পাবলিক ? না সাধারণ বিবেচনায় তা নিশ্চই নয়! কিন্তু তার ড্রাইভার আজম সাহেব কে তো আপনারা খুব সহজেই আম হিসেবেই চিহ্নিত করতে পারবেন! কিন্তু তিনি কিন্তু আম না । কোন আম পবলিক ফোন দিলে তাৎক্ষণিক ভাবে তিন জন তথাকথিত বড় সাংবাদিক দৌড়ে হাজির হন না বা আম পাবলিকের কাছে তিন জন পাওয়ার ফুল সাংবাদিকের নাম্বারও থাকে না। কিন্তু এই ঘটনায় আমরা এইটা টের পেলাম য়ে আম পাবলিকও কেমনে গেইমের ( আসলে যা লুটপাটের অর্থব্যাবস্থা )অংশ হয়ে পরে আর আম থাকেন না।
তো আমরা যেটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম ‘জনগণ’! তাইলে সেই ধারাবাহিকতায়- আম পাবলিক কখন জনগণ হয় এই প্রশ্নটা কিন্তু করা যায়! বাংলাদেশের পাবলিকের একটা বড় আংশ নানা ভাবে রাজনৈতিক পেশার সাথে যুক্ত। এই দলে আমলাদেরও ধরা হয়েছে । তার সাথে আছে এলাকার নেতা- পাতি নেতা সবাই। সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটা কিন্তু বিশাল। যারা মূলত লুটপাটের ব্যাস্থার হীন ঠিকাদার। আমরা অবশ্য এদের প্রকাশ্য বা ছদ্দবেশি রাজনৈতিক কর্মী বলে জানি। এরা আমাদের আমপাবলিকের সাথে মিশে থাকে আম হয়ে। কিন্তু এই আমসকল পোকা ধরা। বাইরে থেকে দেখলে আমই মনে হয় যদিও। আদতে ভিতরে পেকার আবাস ভুমি। এদের কাছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আশা করাটাই কি তামাশা নয়।
ফলে রাজনৈতিক দল সমূহ যখন জনগণের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে তখন কিন্তু সাধারণ চাকরী জিবি, ক্ষেপা কবি বা সংস্কৃতি কর্মী টাইপের আম পাবলিক তো বটেই সমাজের ভিন্ন চিন্তা বা চেতনা ধারী মানুষগুলাও বিবেচনার বাইরেই থেকে যায়। কেন না আগেই বলেছি তারা জনগণ বলতে ‘আমার লোকদেরই বুঝে থাকেন। তাইলে আমরা যারা পাবলিক তারা কিন্তু আর জনগণ হইতে পারলাম না। কারণ আমাদের জনগণ হওয়ার শর্ত আমরা নির্মান করি না। এইটা নির্মান করে ভাড়া খাটা মিডিয়ার সহযোগীতায় রাজনৈতিক দল বা দলীয় সংস্কৃতি কর্মীরা। অর্থাৎ যেই পাবলিক প্রতিদিন জ্যামে সরকারী-বেসরকারী দলের চৌদ্দ গোষ্ঠি ধুয়ে ফেলে যে কায়িক শ্রম বিক্রি করে আর বাজারে গিয়া গালিদেয় যে বিদ্যুৎ না থাকলে রাজনীতির নিকুচি করে শতবার তার কিন্তু কোন কর্তা সত্ত্বা নাই। কিন্তু এলাকার পাতি নেতার কিন্তু আবার মস্তান সত্তা আছে সে হয়তো নেতা হিসেবে পাত্তা পায় না । তার পরেও যেহেতু রাজনীতি নির্ধারিত কথিক জনগণের মধ্যে সে আছে ফলে তার বিবেচনা কিন্তু আম পাবলিকের মত না। তাইলে দেখা যাচ্ছে আম পাবলিক আর জনগণ এক ব্যাপার না। আবার জনগণ বইলা যেই ভেল্কি চালু আছে সেইটার মধ্যে প্রায় গোপন সন্ত্রসের কায়দায় ফাকি আছে। আমি আর থিউরী করলাম না। মানে বুর্জোয়া গনতন্ত্রে জনগণ কি গুরুত্ব ধারণ করে? ক্যামনে মানুষ রাষ্ট্রের নাগরিক হয়া উঠে? তার পর আইন-কানুন আরও মেলা প্যাচাল আছে । আমার ধারণা এই সকল কিতাবি বাহাস আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন।আমি এগুলাই পাশকাটাইতে চাই এই কারণে যে বাংলাদেশের বিদ্যা চর্চা এনজিও বুদ্ধিজিবিতার বাইরে এখনও যাইতে পারে নাই। মানে রাজনৈতিক শর্ত তৈরি করতে পারে নাই। নিদেন পক্ষে মধ্যবিত্তের মধ্যেও পারে নাই।। আর কে না জানে এই এনজিও মার্কা তর্ক রাজনৈতিক ভাবে কত অন্তসার শূণ্য। যা হোক আমার আলোচনার শেষের দিকে চলে আসছি। শুরুতে আমরা দুইটা পয়েন্ট উল্লেখ করছিলাম এক- কর্ত সত্তা দুই- সমবায়িকতার শর্ত। আর এই খানে জনগণ বলতে যেইটা মিন করা হচ্ছে তার অর্থ এই দুয়ে মিলে এক হলেই তৈয়ার হয়ে যায়। মানে এক কথায় জনগণ হল সমবায়িক কর্তা সত্ত্বা।
এখন এই কর্তাসত্তা কি ভাবে কোন নামে কখন হাজির হবে তা আগাম বলা যায় না। এটা হেফাজতের মত অতর্কীতও হাজির হতে পারে। এটা দেখে অবাক হওয়া কিছু নাই। কারণ এইটা সমাজের সোসাল এথিকস এর মধ্যে নিজেকে পোক্ত করার মধ্য দিয়েই হাজির হয় সাধারণত। আপনি যখন নাগরিকদের মধ্যে দলীয় স্বাথে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করবেন যে কোন চেতনার নামে তখন এটা বিপরীত চেতনা নিয়া হাজির হবে। এখন আপনি যদি কেবল মাত্র দলীয় জনগনের প্রধানমন্ত্রী হন তাইলে আপনি ক্ষমতার ফ্যাসিবাদি রুপান্ত স্থায়ী করার জন্য আপনি মিডিয়ার চটকদারি সব চালাকি তো নিবেনই। উপরুন্ত গুলি করে ভিন্ন মত দমন করবেন। আবার যেহেতু মোড়ল দের দেখাতে হবে আপনি গণতন্ত্র, আইন ইত্যাদি মানেন তাই ভোটের আনুষ্ঠানিকতা আপনার লাগবেই। তখন তো আর পারপাবার সহজ রাস্তাটা আর সহজ থাকে না। তখন শুরু হয় ম্যাডনেস। যার একটা নমুনা রাজনৈতিক বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন। এর নাম কর্পরেট ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি। ফলে এই প্রোজেক্টও আবার ক্লেইম করে তারা ‘জনগনের ’ জন্য নিবেদিত প্রাণ। এর মধ্যেই হাজির করা হয় রাজপুত্র বা যুবরাজ এর বানানো িইমেজ। পারিবারিক সৈরতন্ত্র জাড়ি হয় এই তরিকার মধ্য দিয়েই।
এখন আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে, সমবায়িক কর্তা সত্ত্বা কি সামন্ত ব্যবস্থাহীন কালে, সামন্ত রাজনীতির দাশত্ব করতে পারে? বা সেই দাশত্ব করলে কি সে জনগণ হইতে পারে? এর সাফ-সাফ উত্তর হল না। তাইলে বাংলাদেশে কি জনগণ বলে কিছু আছে? এই প্রশ্নের মিমাংসা আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।তাইলে দায়ের কথাটার কি হবে। কাজেই এই মূহুর্তে আম-পাবলিকের নিশ্চয়ই আগে জনগণ হওয়ার শর্ত তৈয়ার করতে হবে। এইটাই কি তার দায় নয়..? তার পার না সে অন্যের দায় নিবে বা দায়ের প্রশ্ন উঠবে। এখন তো সব দায় রাজনীতি বিদরা নিয়ে আম পাবলিকের হতে হারিকেন ধরাই দিছেন। পাবলিক এখন দিশে হারা । সবাই না অবশ্য।একটা অংশ তো জ্বর আসলেও বিদেশ চইলা যায় চিকিৎসার জন্য। তো তার কাছে জনগণ- দেশের কথা এই সবই অর্থহীন। মধ্যবিত্তর একটা অংশও জনগণ হওয়ার কোন শর্ত পালনের রাজনীতির মধ্যে না গিয়ে প্রতিদিনই বিপ্লবের দিবা স্বপ্নে বুদ হয়ে চলেছে। ফ্রন্টাসি কারে কয়। আম-পাবলিককে সমবায়িক কর্তা সত্ত্বা সম্পূর্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলাই হল এই মূহুর্তের বিপ্লবী রাজনীতির কর্তব্য। এইটাই মানুষের দায়। কাজেই এইটা এইমুহূতের রাজনৈতিক কর্তব্য-কর্মও একই সাথে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন