অনন্ত আকাশজন্ম
অকস্মাত আনন্দপাতে কে চেয়েছে অকাল আকাশময় তৃষ্ণাকাব্য বলুনতো?
সেসব ভেবেই কুলকিনারা পাচ্ছেননাতো?
বলি, তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ?
আত্মজন কে আর ভাবছে ততো কে কোথায় কতটা তৃষ্ণার্ত?
আদৌ কেউ কি জানতো এ জগতালোকহীন কি হয় ভাবজগতে?
কাব্যেরও অবোধ্য আদিম বন্দনাতে দুমুঠো অন্ন কি জোটে হদ্দকাঙালের জাতপাতগোত্রে?
তাহলে অনর্থময় আসন্ন হাভাতে ভাবকাব্য থাকুক যোজন দূর।
ফিরুক জগতবাড়ি ফিরুক চড়াইভাতি বর্ণালি ভরদুপুর।
জন্মজন্মান্তর অভিন্ন আনন্দদিন ছায়া ফেলুক তুমুল লাল।
তুমুল সবুজ মাঠে অঝোরে আসুক বর্ষাকাল।
কুয়াশা ধুইয়ে দিক দিগন্তের অবাধ আশ্চর্য পাঠশালা।
সেথায় বসুক শত নাক্ষত্রিক কথামালা।
আজও জলছবি পড়ি
এতটা জ্বলন্ত এতটা শীতল
নাম তার হতে পারে প্রেম হতে পারে দেশ।
অথবা সে ছবিময় অধরা-অশেষ।
যখনই অশেষের জলছবিদের ডাকি
যেন সে বিষম উড়ো ছটফটে পাখি !
ছমছমে সং তার ঝমঝমে গাঁ উদাস
ছুঁয়েছেনে ঘুম আসেনা যেন সে ত্রিগঙ্গার হাঁস !
সূর্যজাগা সৃষ্টিধুম বৃষ্টিধোয়া রঙ
দৃষ্টিকাঁপা হৃদ্যতায় পাঠশালা ঢং-ঢং।
সে বড়ো সবুজ ছায়া দিগন্ত ধূসর
মাঠে-মাঠে ধূলোঘাস অমল দোসর।
সে বড়ো আদিম মেঘভর্তি আগুনিয়া প্রাণ।
শব্দাকাশে স্বপ্নডানা শত্রুমুক্ত গান।
সেসব মুক্তির মানে বাধাহীন বইমেলা ভালোবাসা
অঢেল আনন্দ কিনে বাড়ি ফিরে আসা।
তখনইতো এসে পড়ে সদ্যকেনা পাতার কথাও
কে খন চেয়েছিলো বর্ষার কবিতা বলেছিলো দাও
আজও সে কথামালা আছে তোলা
অবাঙ খাতার 'পরে আজ আবার হয়তো হবে খোলা।
হয়তো হবেনা আহা না ঝর্ণা না বর্ষাবেলা
পদচিহ্নময় বাংলার রূপোলি খেলা
খেলা ফেলে চলে যাওয়ার ঢেউ জীবনে ফেরেনা।
নোঙরের দাগটুকু পড়ে থাকে বটে যেন বা অচেনা।
দেখি ঝকঝকে সব মুখ চকচকে স্নানঘর
অর্ধচেনা অর্ধজানা আশপাশের নতুন কলস্বর।
অই মুখ অই ঘরদোর আমাদেরই পাড়ায় ছিলো
হয়তো তেমন করে নজর পড়েনি আজ হঠাত পড়লো।
আদতে চিরকালীন জলছবি চিরকালই নতুন দেখায়।
অই যে মাঠের পারে রেল যায় যাত্রী ও মালবোঝাই
সে চিরকালের। একলা দাঁড়িয়ে থাকা গাছ কি জগতভোর
সেও। থমথমে দিন চাঁদমাখা সব রাত সমস্তই নতুন ঘোর।
এবঙ মেঘলা ছাত ছাতহীনাদের দুঃখকাল
সেও আমাদের নিত্য উড়ো গেরস্থালিজাল।
আমি কি ভুলেও জানি সামনে কি কবিতা না গল্প
না নতুন না পুরোনো না জেনেই ওড়ে চিত্রকল্প।
এইমাত্র রাস্তায় দেখা নতুন মুখকে মনে করে
হয়তো কবিতা হবে হয়তো বা গল্প পাতারা রাখবে ধরে।
ওই তো সুর্যাস্ত ধরে পাখিরাও ঝাঁক বেঁধে নীড়ে।
কাল আবারও দেখা হবে যথারীতি সূর্যওঠা ঘিরে।
ভাবিঃ জগতের শাদাকালোর ঝগড়া এইবার মিটে যাক দেখি অন্য আলো।
দেখি দূরের ঝাপসামতো দিগন্ত ঝলমলালো।
সে আলোয় ভেসে আসে সনাতন গান।
সে আমার উড্ডীন স্বদেশ হৃদয়ের আনচান।
হৃত ছবিমালা কথা বলে আলোজলে ভাসায় সাম্পান।
সে সহস্র স্তব্ধতায় বাজায় মুক্তির গান।
ও আমার গান যাও যেখানে হৃদয় নত।
শোনো মুগ্ধ রক্তের বাজনা .. অন্তর্গত।
ও আমার গান যাও পাতায় থাকো ..
মনভাঙা সব চাপেও হৃদয়জয়ী গন্ধে ডাকো।
জলের জটিল হিস্যা
তীর জুড়ে বহমান দুই পড়শির বারমাস্যা-তের-পার্বনের কিস্যা।
বড় যে পড়শি সে যে বুঝেও বোঝেনা ছোটর হাজার সমস্যা।
তবে কি বড়র পানে পুরনো সন্দেহজ্বরে পুড়বে ছোটরা !
হৃদয়ের এমন কার্পণ্যে তিস্তারও হৃদয় কালো।
তিস্তাপারের মানুষ কিন্তু দুই পড়শির এসব জটিল জলের হিসাব নোঝেনা .. বোঝেনা ভালো।
তাহাদের দিন কাটে হাজার সমস্যাজালে ..
তাহাদের আশালতা তবু আগাছা জড়িয়ে ভাবেঃ
একদিন ঠিক চূড়ায় উড়বে আমাদের রূপোলি ঠিকানা ..
সোনালি বাতাস এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে ছেঁড়া পালে !
আমি ভাবিঃ সাধে কি আর কবি বলে
' হৃদি ভেসে যায় জলে !'
মফস্বলকাল
সামান্যে বিষম মেতে ওঠার সময়।
চারপাশের বাতাসে যা-যা উতসাহময়
সমস্ত ছোঁয়ার জন্য সে এক হৃদয় ছিলো আমাদের।
মফস্বলে তখনও বিদ্যুত পৌঁছোয়নি ..
সন্ধের আগেই লন্ঠনের কাচগন্ধ ..
রোজের পুরাণ টানা ঘন্টা ধরে ..
তার মধ্যেই বিস্তর ফাঁকিঝুঁকিপাঠ .. দূরের ছটফটানি।
রাত্তিরে ন'টার মধ্যে ভাত, দশটায় ভাইবোন বিছানায় ..
গভীর স্বপ্নের দেশে ছুটছুট ভোরতক বাতাসচূড়ায় ..
পতনের মতো লাগতো মায়ের ডাক .. তখন রোদ্দুর জানালায়।
তারপর দিনমান ইস্কুল .. ইঙ্গিত .. বন্ধু .. মুগ্ধ বিকেল পাড়ায়।
তখন বাংলায় বাঙালির মন ভেসে যেতো সামান্যেই ..
মফস্বলের বাতাস ছিলো সাদামাটা মানুষের সঙ্গেই।
সকলের সঙ্গে সকলের অল্পবিস্তর সম্পর্ক ছিলো তত্ত্ব-তল্লাশের।
সে এক জীবন ছিলো। এখন পার্থক্য ঢের।
পাতাভর্তি মেঘ
পাতাভর্তি মায়া ..
পাতাদের আতপ্ত গাঁ ভেসে যায় বহুদূর
নদীময়।
দেখে-দেখে অদেখায় মনে হয়
আহ পাশে বসি ..
ছুঁয়ে যাই বাংলার মেঘ ..
ছায়া।
শোনো ছায়াময় গান কান পেতে শোনো
শিকড় জাগানো ঘনলাল গান ..
এমন কি আছে আর এমন কি হয় ..
পাতাভর্তি অগ্নিকাল !
সে যে বাংলার মেঘে-মেঘে
মনোজিয়া আলোঘন !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন