এই আমি
চেয়ে দেখি- সবখানেই আমি । আমি । এবং আমি ।
কবে যে বড় হলাম ?
কেউ কি আমাকে হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছিল ?
কিছু মনে নেই ।
চারপাশে কাউকে দেখি না ।
আমার সামনে উদ্ভাসিত আমারই একক মূর্তি ।
আহা, তালগাছ হয়ে আমি উঠে যাই উপরে
আমার নিচে না ছায়া, না আম কুড়োনার ধুম
সুদখোর দুপুরের রোদে পুড়ি আমি নিজেও।
গালে হাত দিয়ে আমাকে দেখে ডালপালাময় অতীত ।
কুয়ায়ন
দ্যাখো-বয়েসী পাইনের আন্তঃমহাদেশীয় চোখে বেগুনী-
হলুদ বিস্ময় জাগিয়ে কেমন ছোটো হয়ে আসে পৃথিবী!
প্রান্তরের সাঁঝের মতো চেপে এসেছে ঐ দিগন্তের দেয়াল
সে-দেয়ালে চোখ রেখে পড়ি নিচ্ছি আজ-
এ মেরু ও মেরু আকাশ-পাতাল, সাতসমুদ্র দশদিগন্ত-
যা আগে ডাগর কাঁচ-নয়নেরও অনায়ত্ব ছিলো।
আহা কি সুখ, দার্শনিক অনিদ্রায় রাত জেগে কষ্ট-কল্পনার
কষ্ট থাকছে না আর! এ সুযোগে শামুকের কাছে প্রাইভেট
পড়ে শিখে নিচ্ছি-গুটিয়ে নেয়ার পাঠ।
কেননা, যেমন খাপটি,- তেমনটি তলোয়ার।
ও ভাই ব্যাঙ, ও ভাই কুয়ো, এই কান ধরলাম-
আর গালি দেয়া নয়,
দ্যাখো-ইতিমধ্যেই কতখানি ছোটো হয়ে এসেছি আমি!
নিভৃতচারীর পৃথিবী
পুরোনো গাছের গুঁড়ি; গুঁড়ির কোটরে বাসা বেঁধে
নিরীহ মুনিয়া ভাবে-
সে যোগ দেবে না প্রতিবাদী ফিঙের মিছিলে
কা-কা স্লোগানে দেবে না কান
যেই কথা সেই কাজ;
অথচ তারপরও নষ্ট হয় নিদ!
কীটনাশকের ঘ্রাণ গোখরোর শ্বাস
বিষের আঙুলে
সুড়সুড়ি দেয় নাকে;
মগডালে বসে-
নাতিনাতনিদের কাহিনী শোনায় ব্যাঙ্গমা-
এক যে ছিল নিরামিষাশি পাদ্রী
আর এক ছিল ইয়া মোটা ষাঁড়…!
পৃথিবীতে একার পৃথিবী বলে কোনোকিছু নেই।
হস্তমৈথুনের কবিতা
আহা রে স্বপ্নের রাত—ছকবাঁধা—ফর্মুলাশাসিত !
কেউ নেই—বউ বা বান্ধবী
কিছু নেই—পাঠ কিংবা পাঠাগার
ছিলো কি কখনো ? স্মৃতির নক্ষত্র কই ?
অথচ রজনী জাগা !
জেগে জেগে কি দেখো রে চোখ !
শহরের সিলবাস রাখেনি জোনাকি
বন্ধ বাথরুমে শুধ শুধু জমে ওঠে নিঃসঙ্গতা
দায়হীন…ভারহীন…
অতএব..অতঃপর…একা একা---
ও মেরে সোনা রে……… সোনা !
হায় ভোরের পাঠশালা, কত কৌতূহল—
পুত্র না কন্যা সন্তান !
পন্ডিতের ঘাম ঝরে…ঘাম ঝরে…ঘাম ঝরে…
আপেল কাহিনী
আপনার পাঠানো আপেলে-যার গায়ে নান্দনিক কামড়ের দাগ,
চোখ পড়তেই প্রশ্ন উঠে এলো মনে: এজন্য আমরা যদি
আদম ও ইভকে দায়ী করি, তাহলে কি আমাদের ন্যায়বোধ নিয়ে
কোনো প্রশ্ন উঠবে কোথাও? ইয়েস, প্রশ্ন তো উঠতেই পারে!
তাহলে যে ঐ প্ররোচনাদাতা রয়ে যাবেন ধরাছোঁয়ার বাইরে!
দেখুন-আজকাল বিধাতার রাজত্ব কায়েম হয়েছে-যেখানে দাঁত ও
নখেরা ভি চিহ্ন এঁকে যায় আপেলে দোল দেয়া বাতাসের গায়ে।
একটি আপেল ঝুলে আছে অসংখ্য নাকের ডগায়
আপেলের গায়ে লক্ষ দাঁতের দাগ, লালার গন্ধ
বিধাতা কি এমন আপেল বানাতে চেয়েছিলেন?
জানি না; তবে আপনি যে এমনটি দেখতে চাননি-
তা কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে জানি;
আপনার পছন্দরেখার ওপর আমার মন লম্ব রচতে
চেয়েছিল দু’একবার-, হয়তো আপনার চোখে পড়েনি।
আচ্ছা ভাই, আপনি কি বলতে পারেন-দেবতাদের বলরুমে
ছুঁড়ে দেয়া স্বর্গের সেই আপেলটি কেমন ছিল?
কি তার রঙ? কি তার গন্ধ? বিশ্বাস নয়, অবিশ্বাসও নয়-
আপেল নিয়ে দেবতাদের ঝগড়ার কাহিনী শুনে হেসেছিলাম
কৈশোরের উঠোনে; এখন দেখি-মানুষের মগজের কোষ বেয়ে
স্বর্গের সোনারঙ দেবতারা নেমে এসেছেন শ্যামল মৃত্তিকায়।
মাঝে মাঝে মনে হয়-আমাদের এ পৃথিবীটা কোনো কমলালেবু নয়
হয়তো এই সেই ঝুলন্ত আাপেল-যার লাল নীল ক্ষত থেকে
ঝরে পড়ছে রক্ত ও কোষ
পুরোহিতের হাসি আর ক্ষেপণাস্ত্রের উত্তেজিত বোতাম ছুঁয়ে
সৃষ্টির সেরা জীব বিষয়ক প্রবাদবাক্যের অন্ধ হরফের ওপর!
ডায়াগনোসিস
এত এত হাটো-বৃক্ষ থেকে বন, জল থেকে নদী
অথচ লজিকের কী লোডশেডিং-
গন্তব্যে পৌঁছাতে পারো না!
তোমার পায়ে চুমু খেয়ে হাসে এলোমেলো হাওয়া:
আহা রে আমার ভূতের পায়ের ফটোকপি!
তোমার পা’দুটি দুলদুলের হলে বাহুদুটি অর্জুনের
এবং মেরুদন্ডটি সুন্দরবনের প্রাপ্তবয়স্ক শালগাছ-
যদি এভাবে বলি-তাতে করে কি এক ভূগোল রাত
এঁকে দেয়া হবে ঝলমলে রোদের খাতায়?
কিন্তু কে বলবে-কেন এই অদ্ভুত অসাফল্য?
তারচেয়ে বরং ঐ যে চক্ষুবিশেষঞ্জ মিন্টু চৌধুরী,
তাকে ডাকো ।
আর গন্তব্য মানেই হাওয়ায় দোলা দূরদৃষ্টির উঠোন।
সে এক অদ্ভুত ব্যর্থতা
মাল্টি-কালার স্বপ্নের ফুটবল নিয়ে খেলতে খেলতে
কিপার-হীন পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়েও
পেলের পায়ে শেষপর্যন্ত গোল হবে না-
হে প্রভু, এও কি সম্ভব? নাকি এর উত্তর খুঁজে পেতে
একুশ শতকের এই নাস্তিক মনটাকে ফিরে যেতে হবে
তর্কযুক্ত তোমার আলো-আঁধারির ফেলে-আসা উঠোনে ?
হায় প্রভু, তোমার কমলালেবুর ঝাঁপিহীন ঝুড়িতে
বিস্ময়ের আর কত মার্বেল লুকিয়ে রেখেছো
ভালোবাসায় মুগ্ধ হতে ভালোবাসার প্রতিভাকে
বারবার লাল-নীল বিহবলতায় ভরে দেয়ার ভাবনায় !
প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমিকের সাজ পরে তার কাছে যাই
আর ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি-
উদার স্তনের নিচে মুখ দিয়ে শুয়ে আছি আমি দুধের শিশু ।
কার্টুনছবির কবিতা
প্রথম দৃ্শ্যটির নাম-আলোর উঠোন
দৃশ্যটির চূড়ায় বসে লেজ নাড়ে বাঘ
বিভিন্ন ধাপে-পাদদেশে
নেকড়ে হায়েনা শেয়াল
তারাই শেয়ার হোল্ডার ;
অন্যদৃশ্যটির নাম-অন্ধকারের খোয়াড়
দৃশ্যটির মাথায় বসে জাবর কাটে গরু
বিভিন্ন ধাপে-পাদদেশে
ভেড়া ছাগল মহিষ
তারাই শেয়ার হোল্ডার ;
দুটি দৃশ্যের মাঝখানে ঘ্রাণছোঁয়া ফাঁক
সেখানে ছোপ ছোপ দাগ;
ছবিটি এঁকেছেন
ঢাকা আর্ট কলেজের ড্রপআউট স্টুডেন্ট মাতিন ।
বোমাবাঁধা মানুষ
গন্তব্য বহুদূর
টিকেট আছে বা নাই
ছুটছে মানুষ
তলপেটে বাঁধা
ক্ষুদ্র টাইমবোমা
ফলে সাবধনী;
গন্তব্যে পৌঁছার আগেই
ফুরিয়ে আসবে সময়
তবু সে ছুটছে প্রাণপণ
আর হাতের কাছে
যা পাচ্ছে
পুরে নিচ্ছে ব্যাগে
কোনোটা কিনে-
কোনোটা চুরি করে ।
কুড়ালের হাসি
চারপাশে কেউ নেই
কেউ নেই চারপাশে
-এ প্রত্যয়ন
দশজন প্রত্যক্ষদর্শীর ।
অতএব কুড়ালই হিরো
আঁটি কাঁধে নিয়ে
ঘরে ফেরা—হুর রে…।
আর দ্যাখো-
কুড়ালের হাসি থেকে
ঝরে পড়ছে বিবর্তনবাদের আলো ।
পাথর নিয়তি
পাথরের ঘাটে বসে পা উঠিয়ে পা ঘষে রজনী
খসে পড়ে অন্ধকার;
পাথরের ঘাটে বসে জামা খুলে নাভি মাজে দিন
ধুলোবালি জল হয়ে যায়;
পাথরের ঘাটে বসে বুক খুলে প্রেম করে সাঁঝ
মুছে যায় বেদনার উল্কি;
অথচ পাথরের দুর্নাম ঘোচে না!
পাথর তো নই, তবু পাথর হয়ে আছি
ঘষা..ঘষা..ঘষা…
ক্ষয়ে যাওয়া..ক্ষয়ে যাওয়া..ক্ষয়ে যাওয়া…
অতএব এসো তুমি কানা মামা
মরু-কাফেলার পায়ে আকণ্ঠ পিপাসা হয়ে কাছে আসে যারা
দিনের সিগন্যাল পেয়ে চলে যায় রাতে
রাতের হৃদয়ে এমবোস সীলের মতো রয়ে যায়
সবকটি পিপাসার কামড়ের ছাপ।
চুম্বন আকাশ হলে কামড়েই প্রত্যাশার সায়
অতএব এসো তুমি কানা মামা
শেরশাহী মোড়ে বসে আছি জলসত্র—বহুব্যবহৃত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন