বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০১৪

শামীম হোসেনের গুচ্ছ কবিতা

  Shamim Hossain

 

 

শেমিজে সুগন্ধ ছিল

হরিণীস্বভাব থেকে
বেরিয়ে আসে কস্তুরী ঘ্রাণ
শামুক গুটানো ছিল
বের হলো কাছিমের মাথা
বুঝি ওখানে নদী ছিল
স্রোতের পাহাড় ঠেলে
উঁকি দিতো কচুরির মুখ;
আর অতি ছোট ঘরে__
মুখে তার বালিকা নাম
রাধা থাকে বুকের ভেতরে!
মৃদু হেসে শহুরে গোঁসাই
শেষ করে বিনীত আলাপ...

আঙুলের মূলবস্তু আলাপে বেজে ওঠে__
শেমিজে সুগন্ধ ছিল কামিজে গোলাপ! 


রঘুদার সুর

একটি সুর খুঁজে বেড়াচ্ছি!

তপ্ত বালিতে মুখ গুঁজে যখন খুঁজছি সুরের নহর
সুরেরা তখন হ্যামিলনে হেঁটে যাচ্ছে
মাংসহীন কঙ্কালের মতো শহরটা ফাঁকা__
কী রকম সুরহীন ঢিলেঢালা...
সুরের বাড়িতে যেন কেউ লাগিয়েছে তালা!

বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে রঘুদার
বেহালার সংসিদ্ধ সুর...

যে সুরটি খুঁজছিলাম সে আমার পিছু নিয়েছে।

দেয়ালে টিকটিকি

দেয়ালে টিকটিকি__ ছড়িয়ে পা
আর ঘড়ির কাঁটা ঝুলে আছে দালির দিকে
প্রশ্নের বুদবুদে ঠিক যখন সূর্য অস্ত যায়
সময় কী দাঁড়ায় এসে কুয়োপাড়ে!

সুনীতি দেবী দেখালেন__
ছুটে যাচ্ছে পরাবাস্তব ঘোড়া...
পেছনে তার সবুজ সবুজ মাঠ
পালা দেয়া খড়ের গাদা
মাঠজুড়ে জংলি ফুলের ফোয়ারা!

দেয়ালে টিকটিকি__ ঘড়ির কাঁটা
সময় হলে ঠিক ঠিক বলে...


মুখোশ ফুটে উঠছে

মুখোশজুড়ে ফুটে উঠছে
বহু বছরের পুরনো হাড়গোড়
নাকের নথ__হাতের বালা__কানের দুল
বাজুবন্দ__দলিল-দস্তাবেজ__উঠে আসছে আর ফুটে উঠছে!

কাঁদছে নরকঙ্কাল__মাথার খুলি
পায়ের গোঁড়ালি__ওষুধের শিশি
চশমার ফ্রেম__বিভৎস স্মৃতি...
আরো কিছু নীতি ও দুর্গতি...

ধীরে ধীরে মুখজুড়ে মুখোশ ফুটে উঠছে!


ঋণ-বর্ষায়

নদীতে আসছে জল__ টলমল...
ঠোঁটের কার্নিশে জমছে বর্ষার মেঘ
শহরে ও গ্রামে অসহ্য বর্ষণে আছি
ছাতার সংসারে চড়–ই-যুগল!

কলাপাতা মাথায় নৌকার গলুই ধরে
যে ধীবর চেয়ে থাকে জলের মায়ায়
বিদ্যুচ্চমকের মতো তার চোখে দেখেছি
খুশির জোয়ার ঠেলে কীভাবে লাফ মারে
রুপালি ইলিশ...

ময়ূর নৃত্যের মেঘ মেঘ সন্ধ্যায়__
তালপাতায় যারা এঁকেছিল বিষণ্ন দিন
বর্ষার নিকটে তাদের ছিল কিছু ঋণ...


প্রকৃতির মমতায়

কবরখানায় একা একা হেঁটে যাওয়া ভালো
এই রাতে নিস্তব্ধ গাছের মতো একা__
যারা ঘুমিয়ে আছে মাটির বাড়িতে আজ
তাদেরও ছিল বুঝি আলিশান ফ্যাট!

এইসব ঝুর-ঝামেলা থেকে দূরে
নিশ্চিন্তে রচিত হচ্ছে ঘুমের পাহাড়
আর দু-একটি পাখি পাতা নড়ানোর বাহানায়
নিরাপদ দূরত্বে রাখছে শিকারির হাত!

এই যে ছড়িয়ে রয়েছে কিছু হাড়হাড্ডি
হাত-পা, মুখ-মুখোশ, করোটি ও করাত
সমূহ বেদনা মাটি তার বুকে নিয়ে
প্রকৃতির মমতায় ঢেকে রাখছে সবুজ ঘাস।


ছায়াটি কোথায় গেল


আমাকে দাঁড়াতে বলে ছায়াটি কোথায় গেল
রোবটের স্নায়ু থেকে খুলে নিয়ে নাট
পাতার রেলগাড়িতে চেপে নিরুদ্দেশ হলো!
কতক্ষণ হলো হাতে ধরে আছি নিজেরই প্রাণ...

আমার অন্ধকার প্রিয় বোন এতক্ষণে আলো জ্বেলে
মাঝপথে এসে রাঙিয়েছে চোখ__
এই গভীর রাতে আর কত সময় দাঁড়াবো বলো?
ছায়াটির হাতে ঘড়ি থাকতেও নেই কি কা-জ্ঞান!

ঘন মেঘ কেটে গেলে পূর্ণিমা আলোয়
ছায়াটি এসে আমার পাশে দাঁড়ালো।


কিছু বনমুরগিও ছিল

অনেক গভীর রাতে বনমোরগের ডাক ভেসে আসে
যেন ধ্বনিযন্ত্রের অডিও সুর ভাসছে বাতাসে...
আমার ছোট্ট এক বাড়ি উপরে তার টিনের চালা
বৃষ্টি এলেই আসমানীদের কথা মনে পড়ে যায়
আর পাশের শিলাবতী খালে__
কচুরিপানা বিছিয়েছে তার সবুজ শামিয়ানা।

শহরের ভেতর এক টুকরো গ্রামীণ জীবন
আমাদের নিয়ে যায় বনমোরগের কাছে
টেনে নেয় কোরাস ধ্বনির অপূর্ব মায়াজালে;
সারিবদ্ধ পিঁপড়ের মতো কান পেতে শুনি__

আমার নানির গল্পের শুরুতে কিছু বনমুরগিও ছিল।


গভীরতর মনে

অক্ষরের ডালি নিয়ে কে তুমি বসে থাকো বহুতল ছাদে
যখন চাঁদ নেমে আসে তোমার নিকটে__
রেশমি বর্ণে বিছিয়ে রাখো জোছনার চাদর।
বহুদূর বনে একা একা কেউ তোমারই ধ্যানে
রেখেছে বুকের ভেতরে__ গভীরতর মনে...

কি রেখেছে সেই ধ্যানস্ত ধ্যানী?
যদি এমন প্রশ্নের তীর ছুটে আসে তোমার দিকে
যদি নদীগুলো কলহাস্যে ছড়িয়ে দেয় জলের ফোয়ারা
যদি অরণ্যের সবুজ নিশ্চুপ হয় দুচোখের পাতায়
যদি হাজারো বুনোকথা উঁকি দেয় মনের মিনারে
তবে সেগুলো সরিয়ে রেখো ঝরনার পাশে__
হিম ঠা-ায় জমাট বাঁধুক শীতল বাতাসে...

বহুদূর বনে একা একা কেউ তোমারই ধ্যানে
কী রেখেছে বুকের ভেতরে__ গভীরতর মনে!


ডানা মেলে প্রত্নের পাখি

ডানা মেলে জেগে আছে প্রতেœর পাখি
কে তাকে নিয়ে যাবে বসন্তপুর?
স্রোতের উজান ঠেলে কুড়াবে ঝিনুক__
গেঁথে দেবে মুক্তোর মালা।

চনমনে হাসির ঝিলিকে
নেচে উঠবে চাঁদ__পূর্ণিমা আলোয় ছড়াবে
বেণীবাঁধা চুল...

কে তাকে দেখাবে পাহাড়ের চূড়ো
জলের গভীরে মৎস্যের সাঁতার
শ্যাওলার সংসারে কেঁপে ওঠা__
নৌকার ভয়!

বিষণ্নতার কাজল চোখে
ডেকে আনবে রাত
লেবুপাতা সুগন্ধি মেখে
ডাকবে বৈশাখ...

ডানা মেলে জেগে আছে প্রত্নের পাখি
কে তাকে নিয়ে যাবে বসন্তপুর?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন