†iv‡`i AuvPo
wPr n‡q ï‡q _vKv gvby‡li †PvL Auv‡K
Qv‡`i AvKvk
Zviv¸‡jv g‡i †M‡j M‡j hvIqv ivZ¸‡jv wVK †R‡b hvqÑ
GKevi b`x‡`i ag©N‡U KweZviv †XD G‡bwQj|
†mevi wk‡LwQjvgÑP‚ovq DV‡Z †bB; P‚ov Lye †QvU
Avwg Rvwb gy‡VvfwZ© b`x¸‡jv †Kv‡bvw`b P‚ovq I‡Vwb|
m¤ú‡K©i †eYx a‡i cZ‡bi cvøywjwc cvV K‡iv hw`
BwZnv‡m a~‡jv R‡g, evZv‡mI jv‡M †mB †iv‡`i AuvPo
GKSuvK AÜKvi Lyu‡U Lvq P‚‡ovi DÌvbÑ
cZ‡bi bxwZ Av‡QÑN„YviI BwZnvm|
nq‡Zv wbwLj bx‡j Qwe Auv‡K wPiAÜ Av‡jvi mš¿vm;
Avgv‡K Dš§v` †f‡e gvBj-gvBj ivZ wM‡j wM‡j Lvq|
cÖZviK wPÎKi;
Avgv‡K cvq bv Lyu‡R wgwQ‡ji Av‡M-c‡i †Mv‡q›`v evqm!
GB bvI mvܨb`x; m~h© g‡i †M‡j w`‡qv gvZvj PzgyK
Avgvi c‡KUfwZ© Z…lvZzi ˆP‡Îi AvKvk
gM‡R †¯øvMvb Zz‡j †R‡M _v‡K ivZ¸‡jv Av‡jvi Kv•ÿvq
P‚ovq I‡V bv b`xцh I‡V †m cy‡o g‡i Zzgyj N„Yvq|
R‡ji Aÿ‡i †jLv
iƒcK_v¸‡jv
†KejB ¯^cœ Avi ev¯Í‡ei Zzgyj Awg‡j
c„w_ex I nƒ`‡qi `~iZ¡ †g‡cwQ
†f‡ewQ g„Zz¨i w`b gvby‡liv cZ½¯^fv‡e
Ny‡i Ny‡i ¯^cœ †`‡L Zij ivwÎi|
AvKv‡k DošÍ b`x Wvbvi cvjK wM‡j Lvq
Kzgvix ¯Í‡bi g‡Zv _‡iv_‡iv †iv‡`i AmyL
eûw`b e„wó †bB gv‡V gv‡V MwjZ Av¸b
Avgv‡`i `„wó Zey m~h© fv‡jvev‡m!
Pvwiw`‡K †iv‡`i wgwQj
evZv‡miv D‡o D‡o †g‡Ni mš¿vm
†Pv‡Li †KvU‡i bv‡g dvwj dvwj jvj ZigyR
wÎfzR evZv‡m fv‡m †iv‡`i cvjK
Avi †divwi †hŠeb
wkgyj Zzjvi g‡Zv †b‡g Av‡m eq¯‹ `ycy‡i
Avgv‡`i g‡b n‡Z _v‡K
GLv‡b kÖveY wQjÑe„wó n‡Zv cÖv_©bvi g‡Zv
AweKj cøve‡bi w`bÑ
jwL›`i †`‡LwQj MvOfiv g„‡Zi fvmvb
g‡b n‡Z _v‡KÑ
Gfv‡e bxj Kgj dzu‡m D‡VwQj
†µv‡ai Av¸b Zvi R¡‡jwQj i‡³i †fZi|
†`k‡cÖg welqK
†mwgbvi †_‡K wd‡i
G fv‡e ZvKvI hw` AvZ¥vi †fZi ïwb cZ‡bi
WvK! ÿzavZ© evN¸‡jvi KiæY gy‡Li w`‡K ZvKv‡Z ZvKv‡Z, wb‡R‡K Lye GKvKx g‡b nq,
g‡b nq AvwgI nwiY| niàvi b`xRy‡o ïiæ n‡j m~‡h©i †iv`bÑwPr n‡q ï‡q _vwK;
`„wóRy‡o Qwe Auv‡K Ph©vi AvKvk| nwiY I
evN welqK †mwgbv‡i wkKvixiv N„wYZ Z¯‹i| Avgv‡`i ivóªhš¿ fv‡jv †P‡b
†kK‡ji Uvb; Avwg †M‡j D‡o D‡o `~i MÖn‡jv‡K, msm‡` wej I‡VÑ gvSiv‡Z †W‡K I‡V
cÖvPxb ZÿK! Zey †Kb fv‡jvevwm cuPv Wvj, †ik‡bi Pvj? NygšÍivRKb¨vi †Pv‡L ¯^cœ
bv‡g c½cv‡ji gZb| Avgv‡`i Nyg ZvB P‡j hvq †¯^”Qv wbe©vm‡b| dzu‡m I‡V RbZvi Xj|
Gw`‡K mgy`ªRy‡o nvO‡ii †mªvZ gvby‡li i³ fv‡jvev‡m| jwL›`i cy‡o †M‡j gbmvi
†µv‡ai Av¸‡bÑwek¦vq‡b †f‡m hvq Avgv‡`i †cÖg| †mwgbv‡i So †Zv‡j Zzgyj
ZvwK©KÑZzwg †Kb Clv‡Yi fvlv fz‡j WvK bv‡g Wv‡Kv?
ক্রীতদাসের ইতিকথা
বন্ধুরা জানেন__ কবির ভবিষ্যদ্বাণী ব্যর্থ হয় না কখনো।
কবি বলেছেন, মানুষেরা ফিরে যাচ্ছে দাসযুগে।
সঙ্গমে অনীহ তারা, ধর্ষণে তাই সুখ খোঁজে।
মানুষেরা খুন করে মানুষের আশা, খুন করে আশ্বাস-বিশ্বাস।
এইসব মানুষের রমণ-গমণ-ক্রোধ সবই দাসের মতন।
ক্রীতদাসেরা
কে কার আগে খুলবে নিজের মেরুদণ্ড, নামে এই প্রতিযোগিতায়;
কে কত মেরুদণ্ডহীন, কার ঘটে কত তেল, সকলই গরল ভেল
যদি না কাজে আসে, মনিবের চরণমালিশে।
এই তেলমালিশেও আছে নানা কায়দাকানুন।
অকারণেই কারও-কারও মাথা নত থাকে।
কারও কারও মেরুদণ্ড খুলে পড়ে অবিকল কেঁচোর মতোন।
আর তারা গড়াগড়ি খায় অর্থেশ্বরের পায়ে চুমো খেতে-খেতে!
সবচে গোপন সত্য___ক্রীতদাসেরা দাস হতো দ্বৈবচক্রে
আজকাল মানুষেরা ভালোবাসে কৃতদাস হতে।
প্রশ্ন সিরিজ: ১
আমার মৃত্যুর দিন চারিদিকে বয়ে যাবে সুরের ঝরনা
একফালি বাঁকা চাঁদ দুলে-দুলে এঁকে যাবে অনন্ত অতীত
লাল-লাল সূর্যাস্তের পশ্চিম আকাশ__আর তারার উঠোন।
আমার যত অচিন্ত্য দিন, রঙিন দুপুর, সাতরঙা সন্ধ্যা
মুত্যুরে করেছে হেলা___তারা সব ভীড় করে দাঁড়াবে তখন।
ডান চোখে জলভরা দিঘি আর বাম চোখে বহমান নদী
ডানাঅলা মাছগুলো সাঁতার ভুলেছে দেখো ওড়ার আনন্দে।
অথচ তাদের কথা ছিল উড়ে উড়ে দূর কোনো বিশ্বে যাওয়ার
কিন্তু আকাশে মেলেনি ভিসা, মেঘেরাও ডেকেছিল ধর্মঘট।
আমার দিনের সূর্য অস্ত গেলে তোমার রাত্রিকে ডেকে এনে
মৃত সব নক্ষত্রের আহ্বানে জেগেছ তুমি কুটিল চিন্তায়।
আমি যাব জলগন্ধা হিজলের বনে-বনে ঘুরে ঘুরে কোনো
এক নিশিপাখি-ডাকা গ্রামের ভেতর।
তোমাকে কী করে ডাকি বলো সেই নিঃসঙ্গ জীবনে আমার?
সংশয়
দাঁড়িয়েছিলাম মেঘের জানালায়
ভেতর থেকে মারেনি কেউ টোকা
বুকের ভেতর ভাঙলো হঠাৎ ঢেউ-
কৃষ্ণ কেন বাঁশিতে ফুঁ দিলো
রাধার বুকে ঘুমিয়েছিল কেউ?
আকাশে সেই পুরনো চাঁদ হাসে
বাতাস বাজায় সেই পুরনো বাঁশি
তবে কেন আমি আবার ছুটি
ঘুমের ঘোরে নদীর ঢেউয়ে-ঢেউয়ে?
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অথবা নীরবতাকে
জানালার পাশে কেন? ওখানে তোমাকে ভালো লাগছে না।
যদি পারো নেমে এসো এইখানে__এই মাঠে বৃষ্টির সংগীতে
যদি আসো__বৃষ্টির এস্রাজ শুনে শুনে ভেসে যাব মেঘের সাম্পানে
তুমি শুধু উড়ে যাবে খোলাচুলে। আর আমি রঙিন প্রজাপতির
ডানা থেকে রঙ এনে নদীরপ্রচ্ছদে এঁকে যাব প্রেমের কবিতা।
জানো মেয়ে জানালার বাইরে কিছুই নেই, ওখানে ধুধু প্রান্তর
ওখানে কৃষ্ণচূড়ায় ফুল নয়, গুচ্ছগুচ্ছ সূর্যের আগুন
তোমাকে ভষ্ম করবে পুড়িয়ে-পুড়িয়ে
তুমি এমন নীরব থাকলে কবি কষ্ট পাবেন, জানো তো__
নীরবতা ভালো নীরবতা ভালো, শুধু মৃত্যুর চেয়ে।
অপেক্ষারও মাত্রা আছে, ধর্যেরও সীমা
অপেক্ষারও মাত্রা আছে, ধর্যেরও সীমা।
শিখেছি মেঘের কাছে___পৃথিবীতে নারী ও নদীর
মতো প্রবহমান কিছু নেই।
তবু আমি ধর্য ধরে থাকি
কেন যে আমাকে
এমন জৈষ্ঠ্যের রোদে পুড়িয়ে-পুড়িয়ে
ভষ্ম করে____
মনেরে কত বার বলি : তুমি একা ছিলে, একাই থাকো।
কার এত গরজ পড়েছে যে, সাড়া দেবে তোমার ডাকে!
মন তবু কাকে যেন ডেকে বলে__
কেন যে আমাকে ধর্যহীন করো তোলো তুমি!
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে
হঠাৎ মেঘে ভেসে এলো আওয়াজ
আকাশ ভরা চাঁদের আলাপন
তারারা গায় মন খারাপের গান
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?
হঠাৎ যদি কেঁদে ওঠে নদী
পাহাড়ও কি উড়াল দিতে চায়
সাগর আমার সহপাঠী হলে
হাজার মাইলের রাত্রি তবে কার?
রাত্রি তো নয়, সকালও নয়, তবু__
সূর্যকান্ত শিশুবৃক্ষ ছায়া
কাঁপলো কেন? হাসলো কেন হাওয়া?
হঠাৎ কেন তারারা আজ রাতে
যমুনা নয়, গোমতীও নয়, শেষে
মেঘনায় এলো কবিতা ভাসানে?
কে বলেছে কবিতা পাঠ? কে?
জীবন ঘষে প্রশ্ন তোলা যে!
আঁধারজোড়া রাত্রি আছে, রাতও
তবুও নদী আদিম প্রশ্ন তোলে___
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?
আমার সম্পর্কে লোকেরা মনে-মনে যা বলে
লোকটা আকাটমূর্খ। কিছুই জানে না। তবু মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটে।
বাদশাহী ভাবখানা। শালা, বদরাগী! বদের হাড্ডি। কাউকে তোয়াক্কা করে না।
কেমন নির্বিকার দিন কাটে তার। কারও কথায় বিচলিত হয় না তেমন।
এই তো সেদিন এলো নগরে। অথচ ভাব দেখায়, বহুকাল ধরে আছে।
দুদিনের যুগী শালা, কথা বলে আমাদের সমানে-সমান।
ঠোঁটকাটা। অপরিণামদর্শী। অসহ্য লাগে, অসহ্য তার-সঙ্গ।
ইচ্ছা করে___ ঘাড় ধরে বের করে দিই___ লাত্থি মারি পাছায়।
শালা গ্রাম্য রাখাল। নগরে এসেছ; ঘুঘু দেখেছ; ফাঁদ দেখোনি।
আমরা কত কী জানি, তুমি তার তিলার্ধও জানো না। অথচ সেই তুমিই
আমাদের করো চরম অবজ্ঞা। বলো, আমাদের এই হয় না, সেই হয় না।
আমাদের চলনে দোষ, বলনেও। শালা গ্রাম্যরাখাল নগরের হাল-চাল
কী বুঝবে তুমি? তোমার পুংটামি বড় বেশি বিরক্তির। কখনো-কখনো ভয়ঙ্কর।
নগরের রীতিনীতি কোনোদিন বুঝবে না তুমি। এসেছ গ্রাম থেকে, গ্রামেই ফিরে যাও।
ময়নাতদন্তের পর লাশের উক্তি
আমার মৃত্যুর পর যারা বেশি খুশি হয়েছিল, তাদের কান্না দেখে অনেকে মনে করেছিলেন আমার মৃত্যুটা বুঝি তারা মেনে নিতে পারেনি। আসলে রোদনবিলাসীদের ক্ষোভ ছিল___ আরও আগে কেন মরিনি! আমি তো অনেক আগেই মরতে চেয়েছিলাম, জীবনানন্দের মৃত্যুর দিন। জীবনানন্দ আমাকে প্রলুব্ধ করেছিলেন। বলেছিলেন, এসো আমরা দুজনে একসঙ্গে মরে যাই। পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকা আসলেই অর্থহীন। এসো মরণে হই ইতিহাস। জীবিত আমাদের মূল্য কানাকড়িও নেই। কবির কথা বিশ্বাস করিনি। ফলত কিছুদিন পর জীবনানন্দের মরনোত্তর-খ্যাতি দেখে ভাবলাম আমার মৃত্যুর সময় হয়ে এসেছে। কিন্তু যমদূত আমাকে এতটাই ভয় পেতেন যে আমার ত্রিসীমায় ঘেঁষার সাহসই হলো না তার। শেষপর্যন্ত স্বেচ্ছামৃত্যুর পথে-ই এলাম। আমার মৃত্যুর পর লাশ পড়েছিল বহুদিন বারান্দায়-উঠোনে। যারা আমাকে কোনো না-কোনোভাবে ঈর্ষা করতেন, তারা আমার মৃত্যুতে এমন ভান করলেন, যেন সহমরণে যাবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো__ আমার মৃত্যু যাদের খুব কাম্য ছিল, তারা আমার মৃত্যুর দিন এমন ডুকরে কাঁদলো কেন? তবে কি আমার লাশের গন্ধে তাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল?
ছবি
জোছনার নখের আঁচড় লেগে থাকা রাতের উঠোনে
জেগে থাকে একজোড়া নিরীহ আকাশ।
আমাদের সন্ধ্যাগুলো ঘনমেঘে ঢাকা
একজোড়া কবিতার রাজহাঁস জলে নামে কেন
কেন তবে দুচোখের কার্নিশ পোড়ানো ছবি আঁকা!
কত দিন নদীদের সমুদ্রসঙ্গম দেখে দেখে
একজোড়া চাঁদ এসে লিখে গেছে হাঙরের প্রেম
ওই ছবি এঁকে গেল অদেখা রোদ্দুর
আমার চোখের ডান পাশে তবু জ্বলে ওঠে নদী
কেন তবে আমি হব এই রাতে প্রেমিক মৃত্যুর?
এপ্রিলের রাত
তোমাকে দেখি না। দেখি__ মাঝে-মাঝে জানালায় ওড়ে
তোমার শাড়ির নীল আঁচলের মতো একখø
বয়স্ক রাতের নদী। এপ্রিলে প্রলাপ বকে কারা?
মুখভর্তি ডিম নিয়ে যন্ত্রণায় কাতর মাছেরা
পাড়ি দেয় অন্ধকার সময়ের ঘড়ি; চোখজোড়া
স্বপ্ন নিয়ে জেগে থাকে মাইল-মাইল কালো রাত।
এইসব স্বপ্নবান ভোরের নদীরা উড়ে যায়
ডানাঅলা মেঘ হয়ে কালিদাস্য শ্রাবণসন্ধ্যায়;
আহা রাজকন্যাদের চোখে শুধু ঘুম আর স্বপ্ন
নামে। সোনার কাঠিরা ভেঙে গেলে রূপার কাঠিরা
অন্ধকারে চাঁদ ভালোবাসে। সূর্য তবু দেশান্তরী।
জানালার পাশে বসে দেখি নীল আকাশের তলে
বৃক্ষগুলো গান শোনে শব্দহীন বাতাসের কানে
একঝাঁক ঝরাপাতা পুড়ে গেলে কারো দীর্ঘশ্বাসে
ভেঙে পড়ে চিরায়ত লাল-নীল মিথের প্রাসাদ,
সত্য তবু প্রিয় নয়; যত প্রিয় মোহন মিথ্যারা!
আকাশ উড়াল দিলে আজকাল বিষণœ সন্ধ্যায়
নির্ঘুম কদম তবু ভালো চেনে পার্বতীর খোঁপা
এ বড় রহস্য জানো__ এপ্রিলের বয়স্ক রাতেরা
একা পেয়ে ঢেউ তোলে কামে-প্রেমে শরীরে আমার!
বাম চোখে চোখ রেখে পাড়ি দিলে কালরাত
অশোকের শিলালিপি থেকে যায় আজন্ম ধূসর;
তোমাকে পাই না কাছে; স্বপ্নে তবু ধরা দাও বুকে।
জীবনানন্দ দাশ বেঁচে থাকলে মনে-মনে যা বলতেন
তবু তুমি চুপ থাকো, এই সব শুয়োরের ঘোঁৎ-ঘোঁতে কষ্ট পেয়ো না মানুষ। আত্মশ্লাঘায় ভোগা শুয়োরেরা কোনোদিন মানুষেরে করেনি সম্মান। এই সত্য মেনেছেন সক্রেটিস-গৌতম-যিশু-মুহাম্মদ। তবে আর তুমি কেন কষ্ট পাও? তুমি কেন পারো না মেনে নিতে? তুমি তো তাদের মতো নও, তুমি তো পথের মানুষ, ঘোরো-ফেরো পথে-পথে। চাঁদের বুকের ঢেউকে যারা কলঙ্কের দাগ বলে প্রচার করে, তারা হয়তো সুখ পায় মিথ্যাচারে। কিন্তু চাঁদের তাতে কী আসে-যায়?
জানো তো, অপমানে যে জ্বলে ওঠে সে হয়তো সাহসী; কিন্তু যে চুপ থাকে সে বড় দুঃসাহসী!
জোনাক রাতের ছবি
কবির রাত্রি নিদ্রাবিহীন নদী
সঙ্গে জাগে মাতাল চাঁদের ঢেউ
হালকা হাওয়ায় মেঘের আঁচল ওড়ে
ঢেউ ভাঙে কার হৃদয়-উপকূলে
জোনাকি নয়, চিত্রকল্প পোড়ে।
শরীরের আর কী দোষ তবে বলো
রাত্রি কাটে সঙ্গীবিহীন চাঁদের
ভরা ফাগুন, বয়স যখন সিকি
এই বয়সে পোড়ায় আগুন, পোড়ায়
জোনাকরাতে শরীরের সব দিকই!
মিথ্যা
পকেট ভর্তি মিথ্যারা তুমুল বিতর্কে মেতে ওঠে
ঢেউদের জুতো পরে নাকি মেঘ পার হতে হতে
পোয়াতি নদীরা ঠিক রাত্রির দূরত্ব মেপে রাখে
এদিকে ফেরারি সূর্য অভিমান ভুলে__
নদীর কোমর খুলে জলরঙে হাওয়াদের ডাকে!
ফেসবুকে খুদে বার্তা পাঠানোর আগে
একজোড়া চাঁদ দেখে মৃত্যুদণ্ড লেখে দূর্বাঘাস
মানিব্যাগে ক্যাশকার্ড পুড়ে যায় ফার্স্টফুডে গেলে
যখন জেনেছি রাত মুখরা রমণী__
চোখজোড়া উপমার স্বপ্ন নিয়ে কেন তবে এলে?
এপ্রিল : ২০১২
১.
হলুদ সন্ধ্যায় ওড়ে মৃতসব নক্ষত্রের লাশ
তবু যে হৃদয় বলে, এই তো সময়
আমাদের ভেসে যাওয়া স্বপ্নসাধ শ্রাবণের রাত
মুহূর্তের জন্য তবু মৃত্যু ভালোবাসে!
চারিদিকে অফুরান সময়ের স্রোত
প্রাণের কল্লোল আর মানুষের মুখের মতন
বোশেখের মেঘ এসে বলে তবু : এই তো সময়!
আহা ঝড়ের তাøব মানুষের মৃত্যু ভালোবাসে!
তবু ওই বোশেখের মেঘ যেন রমণীর মুখ
ঠিক যেন গলে যাবে মোমের আগুনে।
বৃক্ষদের নীরব স্লোগানে
মেঘের গর্জনে
যে সব অমোঘ সত্য শুনেছি, জেনেছি এতকাল-
সেই সব অভিজ্ঞতা সমস্বরে বলে;
বলে অবিকল মানুষের মতো : এই তো সময়!
কোনো এক দৃশ্য আকি; এঁকে রাখি ঘুমের ভেতর
তুলির আঁচড় তবু ভালোবাসে মেঘলা জমিন
বামচোখ বন্ধ রেখে হেঁটে গেলে রাতের আকাশ
মাছ ভেবে চুমো খাই মেঘেদের গালে
অসৎ নদীর স্রোতে ভেসে গেলে মৃত লখিন্দর
জোছনার গান শোনে হাঙরের ঝাঁক
মাছের চোখের মতো স্থির দিন বুড়ো হতে থাকে
জš§ান্ধ ফড়িঙ তবু এঁকে রাখে চারকোনা চাঁদ।
অথবা স্বপ্নের ইতিহাস
মুছে ফেলে রোদের প্রচ্ছদ
লিখে রাখে নিশাচর মানুষের দুর্বোধ্য স্বভাব।
তোমাকে যেদিন পাখি ডেকেছিল ঘুমের ভেতর
বলেছিল : অনুবাদ করে দাও অপাঠ্য আকাশ;
সেদিনও অবিকল মেঘের ভাষায়
গান গেয়ে পাখিগুলো বলেছিল : এই তো সময়!
২.
সবাই বসে আছেন মুখোমুখি হাতে হাতে বিয়ারের গ্লাস।
সে আসরে আমি-
আমার সব লাম্পট্য মেপে দিয়ে হৃদয়ের দরে
চুপচাপ মনোযোগী শ্রোতা!
গ্লাসে গ্লাসে ঠোকাঠুকি, স্মৃতি রোমন্থন
রাজনীতির বিবিধ হিসাব-নিকাশ
অবিকল উঠে এলো কজন বাউণ্ডুলের মহার্ঘসভায়।
সিগারেটের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন তখন;
আজন্ম আসক্তিহীন আমি
সিগারেট-হুইস্কি-বিয়ারে
তবু
মেতে আছি স্মৃতির সভায়
একজীবনে মানুষ কতকিছু পায়; হারায় তারও বেশি
আমিও কি হারিয়েছি কিছু?
ভালোবাসা, প্রিয় রাত্রি? মৃত্যুর মতন প্রিয় ঘুম?
আমার কি কোনো তাড়া ছিল, মনে পড়ে গিয়েছিল কোনো প্রিয় মুখ?
তবে কেন-
আমার বিনিদ্র রাতে উড়ে যায় আকাশের ছাদ
একমুঠো তারা জ্বলে চোখের কার্নিশে
তুমি এসে মুখ তোলো, তুমি এসে জোছনার নদী!
আকাশ মেঘলা হলে কার ক্ষতি বলো?
তোমার ডাক নামের মতো মনে পড়ে শিশুকাল
অবুঝ দোয়েল ডাকা বিষণ্ন দুপুর
রূপার থালার মতো গলে গলে পড়ে যেন রোদ
আমার বিনিদ্র রাতে চুপচাপ নেমে আসে যদি
রূপার থালার মতো থকথকে সূর্য
অথবা ক্ষুধার্ত চোখজোড়া জ্বলে ওঠে আজ কারও-
কেন তবে গান করো প্রেমহীন পৃথিবীতে আর?
আমার হত্যাকারীর প্রতি
আমাকে হত্যার আগে ছুরিটায় শান দিয়ে নিয়ো
গোলাপের পাপড়ির ঘ্রাণে দেখে নিয়ো একবার
আমার হৃদপিণ্ডের ভেতর কেমন জেগে থাকে
আমার হত্যাকারীর প্রতি ভালোবাসা। বিকেলের
সব নদী নদী নয়, কিছু নদী নক্ষত্রের রাধা!
আমাকে হত্যার আগে লিখে রেখো ঘৃণার কবিতা
আমার চোখের কোনে ফুটে থাকা চাঁদের প্লাবনে
ভেসে গেলে লোকালয়__ভেঙে গেলে মেঘের প্রাসাদ
মানুষেরা ভাবে বুঝি__পেয়ে গেছি প্রাণের অকুল...
তোমার বুক পকেটে ডুব দিলে আলোর জোনাক
আঠার হাজার নদী তবে বলো কেন উছলায়?
আমার ঘুমের নাম শ্রাবণের অমাবস্যা; জানো?
কালোরাতে পানকৌড়ি উড়ে গেলে ডানার হাওয়ায়
তুমি এসে খুন করে চলে যেও আমাকে তুমুল।
আমাকে হত্যার আগে হাত ধুয়ে নিয়ো যথারীতি
আয়নায় দেখে নিয়ো মাতালের মুখ;
আমি জানি তুমি সেই নির্দয়-নির্মম হত্যাকারী।
জানতে চাও__
কেন আমি আত্মহত্যা করি না কখনো?
জানো তুমি প্রতিবার আমি শুধু খুন হতে থাকি
কেন আমি অপেক্ষায় থাকি এক হন্তারকের?
আমি জানি তুমি সেই হন্তারক; তুমি সেই খুনি
শোনো খুব ভোরে এসো; নাস্তার টেবিল পার হয়ে
দেয়ালের ঘড়িটার মতো উল্টোমুখী থাকো যদি
দেখবে আমার মেয়ে__আমার স্ত্রী টেরই পাবে না;
দ্বিধাহীনচিত্তে তুমি বসাতে পারবে নীল ছুরি
গরম ভাতের ধোঁয়া ওঠা দেখো যদি বুঝে নিয়ো
একজন লালনের কান্না বড়__ কৃষ্ণের হৃদয়!
তোমাকে বসতে দিয়ে জানালার ছবি এঁকে নেব
বাতাসের আর গতি কত, যত জোর বিশ্বাসের
তোমাকে বিশ্বাস করে আইহন গেল দূর দেশে
তুমি কেন বৃন্দাবনে ছল করে বাজিয়েছ বাঁশি?
রান্নাঘর খুব প্রিয় নয় যাদের, তাদের ভাগ্য
সুপ্রসন্ন হয় মাঝে-মধ্যে; তবে চিরকাল যেন
মাঠে-ঘাটে আর ক্ষেতে যারা শ্রম দেয়, তারা নাকি
নিজের মগজে জ্বালে স্বরচিত সূর্য; অতএব
আকাশকে সাক্ষী রেখে হেঁটে যাও মেঘের আগুনে।
সেখানে প্রিয়নারীর ঘৃণাগুলো অনূদিত হয়
লালরাত্রির ভাষায়; তুমিও কি মধ্যরাতে কাঁদো
ভালোবাসো লালরাত্রি, রক্তলাল মানুষের দেহ?
এসো প্রাজ্ঞ, হে ব্রুটাস, করো খুন আমাকে এবার।
মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা
এদিকে মত্যু আসন্ন!
মানুষেরা ভুলে যায় যৌবনের লাভা আর রূপের আঙুর।
মেঘের শয্যায় কেন ঘুমায় আবার
এইসব চিন্তা বাড়ে হলুদসন্ধ্যায়
সব মেঘ মেঘ নয়__ কিছু কিছু হাওয়ার ছলনা
স্বপ্ন আর বাস্তবের যুগ্মছবি এঁকেছিল যারা
একদিন তারা সব উড়ে উড়ে পৌরাণিক পাখি;
তারা সব মৃত রাতে আলো জ্বেলে স্লোগান মুখর
মানুষের চিন্তা তবু ঘিরে তার যাপিত জীবন
চারিদিকে জমে ওঠে যুগ্মক্ষতি__স্মৃতির শৈশব
রাষ্ট্রযন্ত্র-রাজনীতি__সোনালি মিছিল
প্রেমিকার বামহাতে রক্তের স্বাক্ষর
চুলের বেণীতে দোলা রোদের আঁচল
দৃষ্টির অঙ্গার__মনে পড়ে!
মনে তবু পড়ে__শ্রাবণে মাতাল নদী__অজানা সাঁতার!
অনঙ্গ রূপার চাঁদ দোল খায় টোলপড়া গালে
উঠোনের বামপাশে পুঁই আর লাউয়ের ঝাঁকে
জোনাকি না মেয়েটির হাসি!
মনে নেই? মনে কেন পড়ে না এখন?
ক্রমাগত মাথা দোলে, দ্রুত কাঁপে চোখের পাতা
মগজে কম্পন তুলে থেমে যায় অচেনা আলোক!
এই দৃশ্য স্বপ্নে নয়__জাগরণে আঁকা।
মৃত্যু সমাগত!
পঙ্গু এক শুয়ে আছে জলের চাদরে
স্বপ্নে নয়__জেগে জেগে এই ছবি আঁকে
মৃত্যু তবু বসে আছে হৃদয়ের সমান দূরে
মৃত্যু কেন বসে থাকে? তবে কি মৃত্যুও ঘৃণা করে? ভয় পায়?
রাতভর জেগে থাকে মানুষের চোখে?
মগজে জাগিয়ে ভয় ঘৃণা করে ঘুমন্ত শরীর?
কামনার ভাষা তবু বোঝে না মরণ!
শরীরের ভেতরে শরীর
জেগে ওঠে যখন ক্ষুধায়__মৃত্যু তারে দেয় কোন সান্ত¡নার স্বাদ?
মাথায় ঢোকে না কিছু
কোনো কোনো দৃশ্য তবু জ্বলে ওঠে মগজের কোষে
যেন খুব পরিচিত অথবা সঙ্গত
আসলে স্মৃতি মাত্রই প্রতারণা__বিষ
অহেতুক ডেকে আনা খালের কুমির!
যতক্ষণ আসে যায় এই সব স্মৃতি
যতক্ষণ ঢেউ তোলে স্মৃতির ভাসান
ততক্ষণ বেঁচে থাকা; মানুষের ভালোবাসা
মানুষের প্রেম__উপেক্ষার ভাষা আর ছলনার হাসি
বহুদিন দিয়েছিল এমন আঘাত।
মৃত্যু তবু ঘৃণা করে আমার শরীর?
ঘুম নয়, হতে চাই অন্তহীন নির্ঘুম অসাড়;
মানুষেরা ভুলে যায় মানুষের স্মৃতি
স্বার্থ নয়; স্বার্থ তবু বড় হয়ে ওঠে
বেঁচে থাকা__স্বার্থপর মানুষের দাবি?
কেন তবে বেঁচে থাকা আর
কেন তবে সহে যাওয়া অবহেলা আর
কেন তবে বাঁচা এই করুণার দান?
মানুষের মৃত্যু হলে
মানুষেরা সুখ পায়__হাসে__গায় গান
মানুষেরা মেতে ওঠে খুশির উৎসবে
আমার মৃত্যুর পর সে রকম দৃশ্য হবে জানি
মুহূর্ত অপেক্ষা শুধু!এরপর শুধু
একখø চিরকুট লিখে যেতে চাই__
লিখে যেতে চাই__ঘৃণার স্বাক্ষর আর
অক্ষম আক্রোশ আর ছলনার হাসি
আর ভালোবাসা নয়__নয় কোনো অভিমান
আমি একা যেতে চাই__তর্কহীন প্রাণের ওপারে!
মূর্খ অথবা কবি সম্পর্কিত কয়েক পঙক্তি
এককালে কবিদের সর্বশাস্ত্র জানা ছিল বলে
একালে মূর্খরা কবি!
মাস্তান-ব্যর্থপ্রেমিক__ পাঠ নেই শিল্পে-ইতিহাসে
পড়েনি ভূগোল আর
বিজ্ঞান দর্শনে বিরাগ যার, সেও কবি।
ব্যাকরণমূর্খ-ছন্দকানা অধ্যাপক
বিদেশফেরত টাকমাথা যত বেশ্যার দালাল
আর যত নেশাখোর__সেও হতে চায় কবি!
জগতে সবই চলে নিয়ম-মাফিক
কেবল গ্লমূর্খরা তোলে নিয়মভাঙার দাবি!
বয়স্ক দুপুরের গাথা
বয়স্কদুপুর আজ ঝনঝনে রূপোর কয়েন
বেজে-বেজে ওঠে এক মাথার ভেতর
মনে হয়__
অনন্ত পথের শেষে জাগে কার ধূসর হৃদয়!
দুঃখ তুই চিরসখা হবি যদি তবে
হৃদয়েরে কেন আর মূল্য দিতে চাস?
আহা বেদনারে কত ভালোবাসি
কত মাইল-মাইল রাত পাড়ি দিয়ে
গলিত সূর্যের বুকে এঁকে যাই বেহায়া চুম্বন
একথা তো জানত না কেউ,
না কোনো শিল্পরসিক,
না কোনো প্রেমিক কবিতার;
ও দুপুর মেঘবন্ধু, ও আকাশ নেমে এসো আজ
একখণ্ড শাড়ি হও করোটিশূন্য মগজের!
দূরত্ব
যতটা দূর সম্ভব, তারও বেশি দূরে তুমি
তবু কেন মনে হয়__ নিশ্বাসের কাছাকাছি?
একদিন-একরাত খুব বেশি ঘনিষ্টে কাটালে
আজীবন জমা থাকে দহনের স্মৃতি!
আকাশ অনন্ত হলে পথের দূরত্ব বাড়ে
মাতাল সমুদ্র খোঁজে আকাশের নীল
মানুষের বেদনারা বেঁচে থাকে ব্যর্থ কবিতায়।
জন্মদিন
জন্মদিন এলে মনে পড়ে
কত বর্ষা-কত শীত-হেমন্ত-বসন্ত
পার করে এসেছি এমন!
কত শৈশব-কৈশোরে
কত জলভরা দিঘি-ঢেউ ঢেউ নদী
আমাকে একেলা পেয়ে দেখিয়েছে মনসার ভয়।
আমিও চাঁদসদাগর; হাতে হেঁতালের লাঠি
নির্ভয়ে দিয়েছি পাড়ি সমুদ্রমাতাল।
মৃত্যুরে করিনি ভয়।
আহা মধুর যৌবন__
মৌবনে ঝড় তুলে অসুখী এখন
আমাকে দেখায় নিত্য পাপ-পুণ্যের ভয়।
আমিও জলের নাগর
চুমো খাই হাঙরের ঠোঁটে
তবে কেন হায়__
যতবার ফিরে ফিরে আসে জš§দিন
ততবার শুনি এক মৃত্যুর সঙ্গীত!
হেমন্তের গান
প্রবল ঘুমের স্রোতে ভেসে গেল যারা, তারা নাকি
মৃত রাত ভালোবেসে বহুদিন পর জেগে ওঠে
ধ্রুপদী গানের মতো রোদে ভেজা আকাশে আকাশে!
অথচ আমার চোখে কোনোদিন ঘুম নামে নাই
এমন বেদনা পেলে মাইল-মাইল রাত শেষে
ভিখিরিও রাজাদের সিকি ছুড়ে দিতে ভালোবাসে!
আমার হেমন্ত জুড়ে কত রাত কুয়াশার নদী
একজোড়া মেঘ হয়ে উড়ে যায়__ ঠিক যেন গলে
যাওয়া প্রান্তরের চাঁদ!
অকালে ঘুমালো কেন পথভোলা রাতের বাউল?
মধ্যরাতের গজল
এক.
মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায়; মধ্যরাতে চাঁদ__
একলা ঘরে উঁকি মারে বন্ধ জানালায়
দিঘিও নয়, নদীও নয়, শরীর ভরা ঢেউ
উছলে ওঠে শ্রাবণরাতে আমার বিছানায়।
বর্ষা এলো, বৃষ্টি এলো__ কী যেন কী নেই
সংসারে সব ঠিক-স্বাভাবিক, মনের হদিস কই
আমিও কেমন হদ্দনবিস ভুলেছি নামধাম
নইলে এমন মধ্যরাতে চাঁদ করে থই থই!
দুই.
শহরজুড়ে রাত্রি জেগে আছে
ঝুলন্ত চাঁদ মদের বোতল যেন
কীসের নেশায় বাতাসে কান পাতি?
হঠাৎ দেখি__ আকাশ উল্টে দিঘি
হাজার তারায় পদ্মপাতার ঢেউ
দিঘিও নয়, আকাশও নয়, তবু
তোমার চোখে কীসের নেশা জাগে?
তর্ক অথবা রূপকথা
আজকাল কারো সঙ্গে তেমন তর্ক করি না; চুপচাপ থাকি। হঠাৎ মেঘের সঙ্গে হোঁচট খেলেও আর উড়ন্ত নদীকে আমার মনে হয় না তর্কলিপ্ত সুগন্ধি সাবান। ল্যাপটপ খুলে বসি___ মনিটরে ভেসে ওঠে ভার্চুয়াল ঠোঁট, চুম্বনের দাবি নেই; সঙ্গমেই পেতে চায় জলের স্বাক্ষর। অথচ রক্তের নদী নেচে ওঠে নির্বিকার দেহের ক্ষুধায়। আমরা হেঁটেছি রাত গুনেগুনে তারাভরা মানুষের চোখ। স্বপ্নমুহূর্তের ছবি মনে করে কতদিন নীরবে হেঁসেছি__ কতদিন দাঁড়িয়েছি মুখোমুখি নিজেরা তুমুল। একজোড়া চোখ কেন এমন চৈত্রেও ভাসে শ্রাবণধারায়? তর্কের তুফান তুলে তারাগুলো মরে যায় জেগে থাকে রাত__ আমাদের সত্য তবু সূর্যকান্ত দিন। জলের গহীনে যারা শুনে মৃত মাছের মিছিল__তারা নাকি রূপকথা ভালোবেসে লিখে যায় জলজ লিরিক।
অনামিকা বিষয়ক একটি চিঠির খসড়া
তোমার মেয়ের নাম অনামিকা শুনেছি সেদিন
নেই কেন আমাদের ভালোবাসা-প্রেমের ফসল?
কেন আজ শূন্য এই সোনার কলস?
কেন তুমি নেই পাশে__ এই সব প্রশ্ন আজ জেগে ওঠে মনে।
তোমার স্বামীর কোলেপিঠে নাচে হাসে অনামিকা
তুমি দেখে হেসে খুন__ চুমো খাও মেয়ের কপোলে
শুনে আমি দিশাহারা__ খোদার কসম।
আমার বুকে হাতুড়ি পেটায় ঈর্ষার দেবশিশু...
তোমার নামের সাথে মানিয়েছে বেশ
ও নাম ভারি সুন্দর,
যখনই শুনি অনামিকা তোমার মেয়ের নাম
শ্রাবণের মেঘ ঝরে পড়ে দুচোখে আমার।
আমি ঘুরি হৃদয়ের বালুচরে__ ফকির লালন
আকাশের নীল রঙ ফেরারি প্রেমিক
লোকে তার ভিন্ন অর্থ খোঁজে।
কখনো কি মনে পড়ে আমাদের হারানো অতীত?
যদি মনে পড়ে সেই ভালোবাসা, লুকোনো চুম্বন...
কখনো যদি ফিরে যাও অতীতের সিঁড়ি বেয়ে
দুজনের স্বপ্ন রচনার হৃদয় নদীর তীরে
বুঝি তখন তেমার দীর্ঘশ্বাসে কেঁপে কেঁপে ওঠে
তোমার স্বামীর পাশে অন্ধকার রাত্রির কফিন!
শিরোনাহীন
নামলে যদি জলে তবে ডুব দিলে না কেন?
সমানসুখী বান্ধবীরা দাঁড়িয়ে ছিল কূলে?
রিবন বাঁধা চুলের ভীড়ে চাঁদ ডুবে যায় যদি
নকল জলে স্নান করো আর কেন?
সুখ কি তবে তোমার হাতের মুঠোয় পুরে রাখো
লতার মতো বেড়ে ওঠে আমার গোপন চুমো?
তা হলে আর শরীর ভরা ঢেউ জাগে রোজ কেন
না কি তোমার কামরাঙ্গা মন ভেজাতে চাও জলে?
না-শাশ্বতের গজল
কোনো কিছুই শাশ্বত নয়; না মানুষ, না-কোনো দেবতা। তাহলে মানুষ এত ছোটে কোন স্বপ্নের পেছনে__ এই এক প্রশ্ন নিজেকে করেছি বহুজন্ম ধরে। যখন এসেছি জীবনের উদ্যোনে, তখন মৃত্যুরা ভয়ে কেঁপে উঠেছিল। ভেবেছিল কালান্ধের দেশে এ কোন যমদূত? না-কোনো ভালোবাসার টানে, না-কোনো ঘৃণার__ কোনো ধর্মেই আস্থা নেই দুর্বিনীতের! কী গোয়ার্তুমি এসে ভর করেছে এমন রাতে। আমি বসে আছি যার অপেক্ষায়, সেও গেছে বৃন্দাবনে কৃষ্ণের সন্ধানে। জেনেছি এখানে কেউ একা কৃষ্ণ নয়; হাজার হৃদয়ে জন্ম নেয় রাধার প্রেমিক ।
অন্ধদের ভূগোলে আমি
অন্ধদের ভূগোলে কে তুমি অন্ধ জাদুকর
এই পড়ন্ত বেলায় রুদ্ধশ্বাসে?
পশ্চিমে যেতে কে চায়? পশ্চিমে বিকেল
প্রৌঢ় এই দিন ডাকে অন্ধদের পাঁজর পাড়ায়
অতীতের ঢেউ জাগে বাতাসের আগে
বিরহের দিন বাড়ে হৃদয়ের ভুলে।
কেউ কেউ রাধা নয় পাখি চায়
তারা জানে না আজও পাখি বড় অসহায়।
আজ আর গান গেয়ে পাখি হবো কেন!
হতচ্ছাড়া হৃদয় আমার
তুমিও জানো, তুমিও জানো ভালো
অন্ধরাতের গন্ধমাখা মেঘে
হঠাৎ যদি আষাঢ়-শ্রাবণ নামে
মনে পড়ে লুকিয়ে খাওয়া চুমু।
মনে পড়ে পালকভাঙা শালিক
উড়তে গেলে শূন্য আকাশ কাঁদে
আকাশও নয়, শ্রাবণও নয়, তবু
হৃদয় আমার নদী হতে চায়।
হায়রে হৃদয় হচ্ছাড়া তুই
আকাশ ভরা তারাই দেখলি যদি
কেন তবে কবির হতে গেলি?
চাবির রিং বিষয়ক
চাবির রিংকে হৃদয় ভেবে চায়ের কাপে জুড়িয়ে নিয়েছি দুপুর। মুদ্রিত আকাশ পাঠে বৃক্ষদের মুরিদ হয়েছি, হাঁটু গেড়ে বসেছি ছায়ায়। হঠাৎ মেঘের গর্জনে থেমে গেলে স্বরচিত স্বপ্নের উড়াল, মাটির পালঙ্কে কাটিয়েছি সময়ের দূরত্ব। হিসাব কষে দেখেছি প্রতিটি রাত্রির সঙ্গে মানুষের বয়সের একটা সম্পর্ক আছে। এ-ও এক ধরনের ষড়যন্ত্র বলা যায়। মানুষের জীবন মাপতে হয় খরচ হওয়া মুহূর্তগুলোর আগে। না হলে ফসলের মাঠ ভরে যায় আগাছায়। বিষয়টা কে কীভাবে দেখছে এ নিয়ে একটা গবেষণাও হতে পারে; এর সঙ্গে অভিসন্দর্ভ রচনার কোনো সম্পর্ক নেই। অবশ্যই যারা চাবির রিংকে নিজের জীবনের বৃত্ত মনে করে, তাদের কথা আলাদা। আর যারা বুক পকেটকে কোনো রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভেবে যে কোনো সময় ঢুকে পড়ে রেস্টুরেন্টে তারা খুব ভাগ্যবান। আমার হিসাব মেলেনি কোনোকালে। তবে রাত্রিকে রাত ভেবে পার করেছি অজস্র তারার বয়স। এখানেই চাবির রিং আর মানুষের আচরণের একটা মৌল পার্থক্য রচনা করা যেতে পারে।
দুঃখ-দুঃখ খেলা এক ধরনের আনন্দের নাম
যারা নিজেদের দুঃখী দাবি করেন, তাদের বেশির ভাগই দুঃখবিলাসী। আজকাল দুঃখও বাণিজ্যিক, তুল্যমূল্যে চলে লেনদেন। হৃদয়ের লেনদেনে কেউ-কেউ পাকা হারামি। নাহলে দুঃখটুকু একেবারে বিশুদ্ধ রাখা যেত। মানুষ মাত্রই বিচিত্রগামী,পরন্তু ভেজালপ্রিয়। তাই এই বাণিজ্যিক যুগে বিশুদ্ধ দুঃখী নেই। আসলে দুঃখ-দুঃখ খেলা এক ধরনের আনন্দের নাম। এ খেলার কোলাহলে দুঃখবিলাসীরা কখনো সমুদ্র চেনে না। তাই কোনোদিন জানতে পারে না__ আকাশ নেমে এলে সমুদ্র সঙ্গমে, নীরবতার মানে হয় হাজার রকম।
যে কোনো নামে ডাকতে পারো
আমার আছে তেত্রিশ হাজার ডাক নাম
যার যেমন খুশি ডাকতে পারো
পৃথিবী ও আকাশের মধ্যবর্তী কোনো শূন্যতা নয়
বিশ্বাস ও আপেলের মসৃণ দেহের স্বাদ
কখনো সমার্থক হয় না যদিও
তবুও ধার্মিকেরা মিথ্যেভরা কবিতা ভালোবাসে।
আহা, এও তো এক বিস্ময়!
আমার ডান চোখে স্বপ্নদৃশ্য কাঁপে
বাম পাশে হৃদয়;
আমারে কে কয় কবি, আমি তো মাঠের রাখাল;
আজীবন মাঠে-মাঠে বাজালাম বাঁশি।
তবু কেউ আমারে রাখে না মনে।
রাত্রি যত লাল হয়, তত আমি পার করি রাত
বেদনারে তুমুল ভালোবেসে।
ভুলি বলেই প্রিয়পাঠ্য
এখনো আমি শিক্ষনবিস। পড়ছি তোমার পৃষ্ঠাগুলো।
তোমার মেঘের দাঁড়ি-কমা, নদীর স্বভাব, সেমিকোলন;
সবই আমি ভুলতে থাকি; ভুলেই তো যাই প্রায়-প্রতিদিন।
ভুলি বলেই প্রিয়পাঠ্য
যত বারই মুখস্ত হও, ততবারই ভুলতে থাকি!
হায়রে আমার পাঠ্যসূচি
শেকড়-বাকড় সব ভুলেছি
পাতার স্বপ্নে সবুজ আঁকি। আকাশ তবু নীল হতে চায়!
তোমার নদীর রাধিকা নাম
তবু আমার এই ভুলো মন।
ভুলি বলেই মুছে ফেলি তোমার দেওয়া ক্ষতচিহ্ন।
আমার কবিতারা
আমার কবিতারা বেড়াতে গেছে গদ্যের বাড়ি
ফিরে আসবে শিগগিরই, কোনো এক অচেনা শ্রাবণে
তুমি তো কবিতা ভালোবাসো
তুমিও ঘুরে আসো, দূর কোনো মেঘের সড়কে।
কবিতা কবিকে ছেড়ে যায়, কবিতারা যায়
কবিতারা ফিরে আসে, ফিরে-ফিরে আসে
তোমরা ফেরো না সখী!
যদি ফেরো দেহ ফেরে, মন কবু ফেরে না কো আর!
পায়ের ছন্দে মাপি দূরের গন্তব্য
আমি পদাতিক, পায়ের ছন্দে মাপি দূরের গন্তব্য
দু কদম হাঁটার অভিজ্ঞতা হয়নি যার
সেও যদি শেখাতে চায় পথের ভূগোল?
মাথায় খুন চাপে, চোখে জ্বলে হাজার সূর্যের আগুন
মনে হয় খুনি হই__
যারা আমার মাইল-মাইল পথের সঙ্গী
সেসব রাত্রিকে ডেকে আনি
হৃদয়েরে বলি : খুনি হও, খুনি হও!
চলার ছন্দ শেখাও, পায়ে-পায়ে দূরের আকাশ।
জন্মসূত্রে আমি তোর প্রেমিক ছিলাম
জন্মসূত্রে আমি তোর প্রেমিক ছিলাম
এই কথা কেন তুই রাষ্ট্র করে দিলি?
দিলি যখন, তখন কেন
ও মেয়ে মেঘের সখী, বৃষ্টি ধোয়া মুখ
অন্ধকারে আবার তুই আড়াল করে নিলি?
গোপন কথাটি যদি না থাকে গোপন
আয় তবে জল হয়ে, আমি তৃষাতুর
আকাশ কেঁদে উঠুক মেঘের বিচ্ছেদে
তুই-আমি ডুব দেব নিকষ-আন্ধারে।
ভুল পথে এসেছি যখন
আমার অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ছিল। এখানে আসার কথা ভাবিনি কখনো।
তবু ভুল পথে হেঁটে-হেঁটে এতটা পথ এলাম; কিন্তু গন্তব্য পেলাম না।
সবাই যে যার গন্তব্যে কত সহজে পৌঁছে গেলেন,
আমি একা নির্বান্ধব আকাশের তলে চিৎ হয়ে শুয়ে গুনি তারাদের নিখিলসঙ্গম।
চাঁদ মরে গলে গেলে রমণীরা কোমরে কলসে ভাঙে, আমার রাত্রিরা ঘন হয়ে আসে।
আমি সেই রাত্রিকে বিছানায় তুলি, চুমো খাই মৃত সব নক্ষত্রের থরোথরো স্তনে।
আকাশ যখন নেমে আসে কামাদ্র সমুদ্রে, মাঝে-মাঝে ঝড় ওঠে হৃদয়ে আমার।
উপ-বিকল্প সম্পাদকীয়
হঠাৎ ক্ষেপে উঠলে মনে হয় পৃথিবীটা আস্ত বানচোদ
চারিদিকে কেবল স্বার্থের হোলি।
আবাল্য গ্রামে ছিলাম__ মাঠের রাখাল
শ্লীল-অশ্লীল বুঝিনি
হঠাৎ ক্ষেপে উঠলে__ দিয়েছি গর্জন
আমার গর্জনে কেঁপে কেঁপে উঠেছিল
তেপান্তরের মাঠ__ শান্ত দিঘি, দুরন্ত নদীও।
নগরে এসেছি বলে
ভুলে যাইনি আজও সেই সমুদ্রের ডাক
কেউ লাঠি হাতে সামনে দাঁড়ালে
আজও নির্ভয়ে বলে দিতে পারি__ কাউরে চুদি না।