শিল্পের
মূল উৎস- কালের রুচি, যুগের অভিঘাত এবং শিল্পীর সংবেদনশীল মন। প্রত্যেক
নতুন যুগের জিজ্ঞাসার উৎস সমকালের অভিঘাত এবং অতীতের স্মৃতি। এক যুগের
অভ্যাস ও আচরণ যতই আকর্ষণীয় এবং ফলপ্রসূ হোক, বহুব্যবহারে এক সময় কিশে হয়ে
আসে। শিল্পে-সাহিত্যে___বিশেষত কবিতায় এ বিষয়টি গভীর রেখাপাত করে। অতীতের
স্মৃতি এবং কর্মযজ্ঞ সমকালের সংঘর্ষে নতুন তাৎপর্যে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এভাবে
কবিতা কাল থেকে কালান্তরে বিবর্তিত হয়। অতীতের সব আয়োজন এবং সমকালের
কৌতূহল ব্যক্তির মনোজগৎকে করে তোলে সংশয়ী। এ সংশয়ী চিত্তই জন্ম দেয়
অনুসন্ধিৎসু সত্তার; উদ্ভাবকেরও।
কবিতা___শেষ পর্যন্ত কবির বিশুদ্ধ
কল্পনা এবং মৌলিক চিন্তার যুগ্ম স্বাক্ষর। পাঠলব্ধ জ্ঞান নির্বিশেষ হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে; জীবনোপলব্ধি একান্ত নিজস্ব___স্বাতন্ত্র্য অনস্বীকার্য।
মানুষ তার প্রতিদিনের কাজে বিভিন্ন ধরনের আচরণের মুখোমুখি হয়। এই আচরণগুলো
সব সময় একই রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না সত্য; কিন্তু প্রতিটি আচরণই
স্থান-কাল-ব্যক্তিভেদে একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়াকে প্রতিপন্ন করে। প্রকৃতির
নিয়মানুবর্তিতা নীতি এ ধরনের আচরণকে অস্বীকার করে না। এ ছাড়া সময়ের
ব্যবধানে মানুষের আচরণগত যত পার্থক্যই থাকুক, ইতিবাচক আচরণ বা শিষ্টাচারের
প্রতিক্রিয়ায় নেতিবাচক আচরণ সাধারণত অসম্ভব। এ নিয়ম স্থান-কাল-ব্যক্তি
নির্বিশেষে মান্য। শিল্পে কল্পনাকে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মনে করতেন হেগেল।
তার মতে___The work of Art is of higher rank than anyproduct of nature
what ever which has not submitted to the passage through themind. .
অর্থাৎ শিল্প প্রাকৃতিক সৃষ্টির চেয়ে অনেক উন্নত, কারণ শিল্প সৃষ্টির
নেপথ্যে থাকে মনের মধ্যস্থতা। মনের মধ্যস্থতার অর্থ হলো কল্পনা এবং
বস্তুসত্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। আবার প্লেটো যখন বলেন___শিল্প ইমিটেশন
বা নকল, এ কারণে তা সত্য থেকে অনেক দূরে। তখন অ্যারিস্টোটল শোনান অন্য
কথা___শিল্প বাস্তবের নকল হলেও বস্তুগত সত্যের চেয়ে বেশি জীবন্ত। এ অর্থে
কবিতা সমাজের ছবি নয়; প্রতিচ্ছবি। ছবি যে দৃষ্টিভঙ্গি বা অবস্থান থেকে তোলা
হোক, প্রায় একই রকমই দেখায়, কিন্তু প্রতিচ্ছবি বা প্রতিকৃতি একই শিল্পীর
হাতেও বিভিন্ন রূপ নেয়। সুতরাং সত্য থেকে দূরের বিষয় হয়েও কবিতা-শিল্প
মানবমনে বস্তুসত্যের চেয়ে বেশি অভিঘাত সৃষ্টি করে।
মানুষ কল্পনায় সব
সময় মৌলিক___প্রত্যেক মানুষই স্বতন্ত্র কল্পনা-শক্তির অধিকারী। সৃজনশীলতার
অঞ্চলে এ তথ্য আরও বেশি সত্য; বিশেষত কবির কল্পনা। মানুষ নির্বিশেষ জ্ঞানের
অধিকারী হতে পারে___একজনের পাঠলব্ধ ধারণা এবং জীবনাভিজ্ঞতার সঙ্গে
অন্যজনের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যেতে পারে; কিন্তু এমন দু জন মানুষ খুঁজে
পাওয়া যাবে না___যাঁরা অবিকল একই স্বপ্ন দেখেন এবং একই ধরনের কল্পনার
অধিকারী। কবিদের ক্ষেত্রে এই কথাগুলো শতভাগ খাঁটি। ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র
ভূমিকায় জীবনানন্দ দাশ বলেছেন___‘কবিতা কী___এ জিজ্ঞাসার কোনো আবছা উত্তর
দেওয়ার আগে এটুকু অন্তত স্পষ্টভাবে বলতে পারা যায় যে কবিতা অনেক রকম।’
উদাহরণ হিসেবে হোমার, মালার্মে, র্যাঁবো, রিলকে, শেক্সপিয়র, বদলেয়ার,
রবীন্দ্রনাথ ও এলিয়টের কবিতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ‘কবিতা অনেক
রকম’___কথাটার অর্থ এই নয় যে, আবেগঘন মানপত্র কিংবা ঘনরসে সিক্ত প্রেমপত্রও
কবিতা। যেমন ‘মানুষ অনেক রকম’ বললে, নৃতত্ত্বের দিক থেকে ককেশিয়ান,
মঙ্গোলিয়ান এবং নিগ্রোহ, লৈঙ্গিক দিক থেকে নারী-পুরুষ, সভ্যতার দিক থেকে
সভ্য-অসভ্য___বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ করা যায়। কিন্তু কেবল চেহারার সাদৃশ্যের
কারণে কেউ গরিলাকে মানুষের পর্যায়ভুক্ত করে নিশ্চয় মানবজাতির শ্রেণীকরণ
করেন না। তেমনি ‘কবিতা অনেক রকম’ বললে বুঝে নিতে হবে, কবিতা-ই অনেক রকম।
কবিতার কাছাকাছি ভাবালুতাপূর্ণ কোনো মানপত্র-প্রেমপত্র-আত্মবিলাপের কাব্যিক
বিলাস নয়। কবির মনীষার কাছে কবিতা সৃষ্টির কৌশলই বড় দায়। কবিতার মুখ্য
উদ্দেশ্য___মানবচিত্তে রস সঞ্চার। এর জন্য লেখককে হতে হয় মৌলিক চিন্তা ও
কল্পনার অধিকারী। যিনি স্রষ্টা, বিনির্মাতা নন; তিনি মেকি শিল্প বিনির্মাণ
প্রকল্পে অনীহ এবং দৃঢ়চিত্ত। টলস্টয় ‘হোয়াট ইজ আর্ট’ প্রবন্ধে মেকি
শিল্পসৃষ্টির ৪টি অনুষঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো___ধার করা,
অনুকৃতি, চমকসৃষ্টি এবং কৌতূহলোদ্দীপন। শিল্প সৃষ্টির প্রেরণা হিসেবে তিনি
বলেছেন, ‘সমাজের কোনো একজনের তীব্র আবেগ অন্যের চিত্তে সঞ্চারের জন্য যখন
কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, একমাত্র তখনই হয় সর্বজনীন শিল্প।’ অন্যদিকে
মেকি শিল্পীরা উচ্চবিত্তের রুচি ও দাবি মেটানোর জন্য শিল্প সৃষ্টি করেন।
ফলে মেকি শিল্পের উৎস শিল্পীর অন্তর্নিহিত আবেগ-উৎসারিত নয়, উচ্চবিত্তের
দাবি মেটানোর প্রয়াস মাত্র। সৎ-সাহিত্য মাত্রই সৃষ্টি___মেকি সাহিত্য
বিনির্মাণ বা অনুকৃতি। এ কারণে মেকি সাহিত্যিকের চিন্তা ও কল্পনা যেমন ধার
করা, তেমনি অনুকরণও। কবি যেখানে বোধের গহনে অভিঘাত সৃষ্টি করেন সেখানে
উপ-কবির অবলম্বন বাক-চাতুর্য। এই তিনের সমন্বয়ে কৌতূহলের জন্ম। কিন্তু কবি
নিজের প্রজ্ঞার কাছে সৎ থাকেন বলে উপলব্ধি এবং বোধের অনুবাদ করেন। এর মূলে
ভূমিকা পালন করে যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা, পাঠলব্ধ ধারণা এবং নিত্য-অনিত্য
ঘটনা-প্রবাহ।
কবির প্রধান সম্বল___কল্পনাশক্তি। এরপর দৃষ্টির প্রাখর্য,
অনুভবের তীক্ষ্মতা এবং স্বতন্ত্র প্রকাশশৈলী। ব্যক্তির প্রতিভা বা মেধার
স্তরভেদে কবিতার উৎকর্ষ-অপকর্ষ অনেকাংশে নির্ভরশীল। অনেকান্ত বিষয়ের ভেতরও
প্রকৃত কবি নিজের কল্পনাকে প্রসারিত করেন, আপন রুচির অনুকূলে কোনো
নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচনের দতা দেখাতে পারেন; দেখানও। শিল্পকলা এবং চিন্তার
প্রায় অঞ্চলে প্রত্যেক শিল্পী এবং চিন্তক স্ব-স্ব ক্ষেত্রে আত্মমগ্ন। ওই
বিশেষ অঞ্চল ঘিরেই তার স্বপ্ন-কল্পনা এবং চিন্তা আবর্তিত। জীবনানন্দ দাশ
‘কবিতার কথা’য় ব্যক্তির বহুমুখী প্রতিভাকে স্বীকার করলেও একই সঙ্গে একই
ব্যক্তির একাধিক অঞ্চলে সমান পারদর্শিতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি এবং মননরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে একই সঙ্গে
বিচরণ করা এবং প্রত্যেক বিভাগে সমান প্রকর্ষ দেখানোর সম্ভাবনাকে
প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন শাখায় যারা সমান পারদর্শী তাদের
‘উপকবি’ এবং ‘উপ-দার্শনিক’ বলে অভিহিত করে লিখেছেন___‘প্রতিভা যাকে কবি
বানিয়েছে, কিংবা সঙ্গীত-বা চিত্রশিল্পী বানিয়েছে___বুদ্ধির
সমীচীনতা___শিল্পের সেই দেশেই সে সিদ্ধ শুধু___অন্য কোথাও নয়’। তাই কবির
কাছে তার সমাজের___সবকালের সব সমাজেরই প্রত্যাশা হওয়া উচিত___কবিতা। অন্য
ধরনের রচনা তার সাধ্যাতীত না হলেও তার কাছ থেকে কবিতা ভিন্ন অন্য কাজ চাওয়া
অনুচিত। কবিকে কবিতা ভিন্ন অন্য কোনো রচনায় ব্যস্ত রাখলে তার কবি প্রতিভার
প্রতি সামান্য হলেও অবিচার করা হয় বলে মনে করতেন জীবনানন্দ দাশ। কবিতা
লেখার আগে কবির ব্যাপক প্রস্তুতির ব্যাপার থাকে___পঠন-পাঠন নয় কেবল; দীর্ঘ
সময় ধরে ধ্যানস্থ হওয়ার মতো যথেষ্ট অবসর না পেলে তার কাছ থেকে সংখ্যাতীত
কবিতাপদবাচ্যের রচনা হয়তো পাওয়া যায; কিন্তু সে সব রচনা তার মেধা ও
প্রতিভাকে প্রতিভাত করতে সমর্থ হয় না।
কবিতার সময়___কবিতা চর্চার
ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কবিতায় যে সময় চিত্রিত হয় সে সময়ের সঙ্গে
কবির সম্পর্ক কেমন___ওই সময়ের ধারণা কবি সত্তাকে কী পরিমাণ আলোড়িত করে তা
সততার সঙ্গে চিত্রায়িত করার সঙ্গে সঙ্গে সমকালের রুচি এবং প্রধান অসুখ
শনাক্ত করার দায় কবির ওপর বর্তায়। ব্যর্থতায় বর্তমানে বসেও কবি কেবল
প্রাগৈতিহাসিক যুগের কল্পিত কাহিনিই বর্ণনা করবেন। ওই বর্ণনার সঙ্গে
স্বকাল-স্বসমাজের কোনো সম্বন্ধ কিংবা সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। কবি
স্বসমাজের গতি ও ঘটনা প্রবাহের প্রত্যদর্শী এবং ভাষ্যকার; কিন্তু ওই বিশেষ
কালখণ্ডেই তার চিন্তা-কল্পনাকে সীমাবদ্ধ রাখেন না। এর কারণ সম্পর্কে সৈয়দ
আলী আহসান ‘আধুনিক বাংলা কবিতা : ভূমিকা’য় উল্লেখ করেছেন___‘কবির দায়িত্ব
হচ্ছে যুগের সত্যকে এবং প্রাণধর্মকে আবিষ্কার এবং এ আবিষ্কারের চেষ্টায়
তিনি যুগের ঘটনা-পরম্পরাকে স্পর্শ করেন, কিন্তু তার মধ্যে আবদ্ধ থাকেন না’।
এভাবে যুগের সত্য এবং কালের রুচির সম্মিলনে কবি হয়ে ওঠেন
আত্মজিজ্ঞাসাতাড়িত। বাইরের ঘটনা পরম্পরার প্রতিক্রিয়ায় কবি ভেতরে ভেতরে
উদ্দীপিত হন; সে উদ্দীপনা এবং উৎকণ্ঠা মিলে আত্মজিজ্ঞাসার জন্ম দেয়। সব সময়
ওই আত্মজিজ্ঞাসার উত্তর সাজানো থাকে না___শিল্পে-সাহিত্যে-দর্শনে এমনকি
বিজ্ঞানেও। ফলে কবিকে নিজের এবং স্বসমাজের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। প্রবল
আত্মক্ষরণে ক্লান্ত হতে হতে শেষ পর্যন্ত উত্তরশূন্য প্রশ্ন করে যান কবি। ওই
প্রশ্নের উৎস স্বকালের আর্থ-সামাজিক অব্যবস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং
ব্যক্তির মনোবিকার।
কবিকে কেবল প্রশ্নশীল হলেই চলে না___হতে হয় মনীষার
অধিকারীও। মনীষার অভাব ব্যক্তির সব অনুসন্ধিৎসাকে করে তোলে নিছক পরিদর্শন।
ফলে কবিতায় ঘোরের পরিবর্তে তৈরি হয় দুর্বোধ্যতার। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত অনেক
আগেই বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলেন। ‘উক্তি ও উপলব্ধি’ প্রবন্ধে
লিখেছেন___‘এ-যুগের সহৃদয়হৃদয়সংবেদ্য সাহিত্যও মন্ময় নয়; এবং যাঁর
চিৎপ্রকর্ষ যত অসামান্য, তিনি যদি ততোধিক নৈর্ব্যক্তিক হতে না পারেন, তবে
তাঁর আত্মপ্রকাশের আশা বিড়ম্বনা। পক্ষান্তরে অহংকারবিস্মৃতির অনন্য উপায়
বিনা প্রশ্নে অবগতির আজ্ঞাপালন; এবং অবগতি যেহেতু ঐকান্তিক, তাই তার
বিজ্ঞাপন ন্যায়ত অসম্ভব।’ চিৎ-প্রকর্ষের প্রশ্নে ব্যক্তির নির্বুদ্ধিতা এবং
মেধাশূন্যতার একটি নেতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। অনুভূতির তীক্ষ্মতা সত্ত্বেও
অপ্রকাশের কারণে চিৎ-প্রকর্ষের প্রমাণ মেলে না; প্রচুর জীবনাভিজ্ঞতা
সত্ত্বেও মনীষার অভাবে সময়কে ধারণ করা সম্ভব হয় না। এর কারণ নির্বুদ্ধিতা
এবং মেধাশূন্যতা। কবিকে একই সঙ্গে কালসচেতন এবং মনীষার অধিকারী হতে হয়।
মনীষাভিন্ন ভাবালুতার চর্চা চলতে পারে, তাতে আবেগের বিশুদ্ধতা এবং কল্পনার
অভিনবত্ব রা করা চলে না।
কবিতার সময় এবং কবির মনীষা একই সূত্রে গাঁথা।
কবিতা কালজ্ঞানশূন্য প্রপঞ্চ নয়; সময়কে আশ্রয় করে হয়ে ওঠা ব্যক্তির আবেগ ও
প্রজ্ঞার সততাপূর্ণ স্মারক। কবিতা চায় সাহিত্যিক সততা; চাতুর্যকে দেখে
সন্দেহের চোখে। ফলে সময়ের কাছে, মানুষের আপন-আপন জীবনাভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির
সত্যভাষণ প্রকাশ করতে হয় কবিকে। সময়ের অভিজ্ঞানের সঙ্গে ঐতিহ্য এবং
আবহমানতার প্রসঙ্গও জড়িত। কবিকে ঐতিহ্যসচেতনও হতে হয়। এর কারণ, কবিতা
পরম্পরাহীন কোনো জড়বস্তু নয়___পূর্বাপর ঘটনার ধারাবাহিক প্রপঞ্চ। ঐতিহ্যের
সঙ্গে ইতিহাসের সম্পর্ক সুনিবিড়। যেখানে ঐতিহ্যচেতনার স্বার মেলে, সেখানে
ইতিহাসের পাঠও বড় ভূমিকা রাখে। এলিয়ট ‘ঐতিহ্য এবং ব্যক্তিগত প্রতিভা’য়
বলেছেন__ This historical sense, which is a sense of thetimeless as
well as of the temporal and of the timeless and of the temporal
together, iswhat makes a writer traditional. And it is at the same time
what makes a writermost acutely conscious of his place in time, of his
own contemporancity.অর্থাৎÑইতিহাসচেতনা হলো এমন এক চেতনা, যা পৃথক
পৃথকভাবে ঐতিহ্যিক চেতনা ও সীমাহীন চেতনা এবং এ দুটির সমন্বয় যা একজন
লেখককে ঐতিহ্যিক করে তোলে। ইতিহাস- সচেতনতা লেখকের দায়িত্ব তাঁর সমসাময়িক
প্রোপটে, কালপরম্পরায় তাকে সূক্ষ্মভাবে সচেতন করে তোলে।’ অতীতে সংঘটিত কোনো
ঘটনার রেশ কিংবা বিশেষ কোনো ঘটনার প্রভাবে সৃষ্ট মিথ এবং ঐতিহ্য
কথাশিল্পীকে করে তোলে চিন্তাশীল; কবিকে আত্মমগ্ন। ঐতিহ্যের রূপান্তর এবং
সমকালের ঘটনা প্রবাহের বিশ্বস্ত চিত্রায়ণে কবির কালচেতনার স্বার মেলে।
শেক্সপিয়র, সফোকিস, রবীন্দ্রনাথ, হুইটম্যান, বায়রন, নজরুল, মানিক,
জীবনানন্দ প্রমুখের সাহিত্যকর্মে অতীত ঐতিহ্যিক পরম্পরা এবং সমকাল
অভিজ্ঞতার আলোয় চিত্রিত। রবীন্দ্র-সাহিত্যে যতটা আধ্যাত্মসংকট প্রকাশিত,
নজরুল-মানিকের সাহিত্যে মানবতা ততটাই উচ্চকিত। জীবনানন্দ বিশ্বব্যাপী
রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রত্য করার পরেও সরব নন, কিন্তু গণদাবি এবং জনরুচির
প্রতি তাঁর সমর্থন অকৃত্রিম এবং মানবপ্রেমে অবিচল।
কবির মনীষার গুণেই
ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের শিা কবিতার অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। মনীষার সংকট কবিতাকে করে
তোলে নিছক বিনোদনের উপচার। কবিতা জ্ঞানার্জনের উপায় নয়, কোনো বিশেষ
কালের জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে কবিতা পাঠ করলে পাঠককে হতাশ হতে হয়। কবিতায় সময়
ধারণ করতে হয়___সময়কে মহাকালের অংশ হিসেবে নয় কেবল, বরং সময়ের স্বারকে
মহাকালের নিত্যসভায় ঠাঁই করে দেওয়ার লক্ষ্যেই। সময়ের সঙ্গে ঐতিহ্যের
সম্পর্ক স্বীকার করে নিলে এও মানতে হয়___সময় ও স্থানের সম্পর্কও নিবিড়।
শঙ্খ ঘোষ ‘কবি আর তাঁর উপাদান’ প্রবন্ধে বলেছেন___‘কবিতার আধুনিক প্রতিমায়
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য স্থানিক রূপের সঙ্গ গূঢ়ভাবে মিশে যায় সময়ের বোধ, দেশকালের
সম্পৃক্ত হয়ে স্বপ্রতিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ায় এক-একটি ছবি।’ এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে
হবে, কবি কালের জাতক হয়েও মহাকালের স্রষ্টা, চরাচরের জ্ঞান-অন্বেষণে ব্রতী
হয়েও প্রজ্ঞার উৎস।
সময়ের অপব্যয় এবং মনীষার অপচয়ে শুরু হয় মূল্যবোধের
অবয়। সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে কাব্যিক মূল্যবোধের পার্থক্য
সূক্ষ্ম হলেও স্পষ্ট এবং ব্যাপক। কবিতায় নৈতিকতার প্রশ্ন অবান্তর___কাব্যিক
মূল্যবোধ সামাজিক মূল্যবোধ থেকে ভিন্ন। সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ সমাজের
তৈরি। কোনো সময়ে কোনো একটি বিশেষ সমাজ ব্যবস্থায় ওই মূল্যবোধ সমান হারে
সামগ্রিকভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু কাব্যিক মূল্যবোধ স্থান-কাল-ব্যক্তিভেদে
সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এ মূল্যবোধ কবির স্বসৃষ্ট এবং তাঁরই ব্যক্তিগত ও
কাব্যিক সততার সঙ্গে এর সম্পর্ক। বাইরের শক্তি এসে এ সম্পর্কে যেমন চিড়
ধরাতে পারে না, তেমনি নিয়ন্ত্রণও করতে পারে না। কাব্যিক মূল্যবোধ লালনের
েেত্র কবি স্বয়ম্ভু; সার্বভৌমও। এ প্রসঙ্গে বেনেডেটো ক্রোচের উক্তি
উল্লেখযোগ্য__Art is independent both of sceince andof the useful and
the moral. অর্থাৎ ‘শিল্প বৈজ্ঞানিক, ব্যবহারিক এবং নৈতিক জগৎ থেকে
সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।’ ক্রোচে আরও বলেছেন, শিল্পে কোনো উদ্দেশ্য সন্ধান
সম্পূর্ণ হাস্যকর। এ প্রসঙ্গে বিনয় ঘোষ ‘সত্য ও বাস্তব’ প্রবন্ধে
লিখেছেন___‘শিল্পের উদ্দেশ্য জীবনের সত্যকে উপলব্ধি করে তাকে ব্যক্ত করা।
সত্যের অভিব্যক্তি বাস্তবের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন নয়, সম্পৃক্ত।’ ওপরের দুটি
উদ্ধৃতি স্বীকার করে নিলে এও মানতে হয়, নৈতিকতা একটি আপেকি বিষয় এবং
কাব্যিক মূল্যবোধ সম্পূর্ণ শৈল্পিক, কোনোভাবে সামাজিক মূল্যবোধকে আশ্রয় করে
নয়। শিল্পের সুর এবং জীবনের অনিবার্য সত্য একই সুরে বাজে___কখনো কখনো।
জীবন-শিল্প এবং মহাজাগতিক বিষয়ে মানবচিন্তার অঞ্চলে মূলত প্রশ্নশীল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সাহিত্যের স্বরূপ’ প্রবন্ধে লিখেছেন___‘বিষয়ের
বাস্তবতা-উপলব্ধি ছাড়া কাব্যের আর একটা দিক আছে, সে তার শিল্পকলা। যা
যুক্তিগ্রাহ্য তাকে প্রমাণ করা সহজ, যা আনন্দময় তাকে প্রকাশ করতে চাই।’
আবেগ থেকে উৎসারিত বিষয়ের অধিষ্ঠান মানুষের হৃদয়; বুদ্ধির প্রাখর্য এবং
প্রজ্ঞার শাসনে তার মর্ম-উপলব্ধি সম্ভব নয়। কবিতা বুদ্ধিবৃত্তিকে সমীহ করে,
ভালোবাসে সংবেদনশীলতাকেই। এ সবই ঘটে সময়ের রুচিভেদে, মানুষের চিরায়ত
বাসনার সঙ্গে নিত্য-অনিত্য অভ্যাসের অভিঘাতে।
সময়ের নির্দিষ্ট পরিচয়
থাকে; থাকে বিশেষ সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিশেষ চিত্রও। এ জন্য কবিকে
হতে হয় কাল-সচেতন। ওই কালসীমায় অর্থনীতির আবর্তন এবং অর্থের ব্যবহার
সম্পর্কে পূর্ণ ধারণাও তাঁর থাকতে হয়। যুগের পরিবর্তনে প্রধান নিয়ামক শক্তি
অর্থ; আর্থিক নিশ্চয়তা কবিকে রাখে সক্রিয় এবং চিন্তাশীল। চিন্তা ও কল্পনার
সক্রিয়তাই কবি সৃজনক্রিয়ার প্রধান নিয়ামক হয়ে ওঠে। আধুনিক কালের কবির
আশ্রয় যুক্তিহীন ভাবালুতা নয়; মনীষাশ্লিষ্ট অভিজ্ঞানে। আবেগের আতিশয্য নয়;
সংহতিতেই তার স্বস্তি। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ‘উটপাখি’ কবিতায় স্বীকার
করেছেন___‘আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে/ আমরা দুজনে সমান অংশীদার/ অপরে
পাওনা আদায় করেছে আগে/ আমাদের পরে দেনা শোধবার ভার’। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক
বন্ধ্যাত্বের ফলে একটি বিশেষ সময়ে সমাজে-রাষ্ট্রে যে পরিমাণ অভিঘাত সৃষ্টি
করে, একই পরিমাণ রেখাপাত ঘটে ওই সময়ের অগ্রসর কবির হৃদয়ে।
কবি___সহৃদয়হৃদয়সংবেদী বলেই, কখনো হয়ে পড়েন আবেগে আপ্লুুত, কখনো
দুঃখে-যন্ত্রণায় কাতর। কিন্তু ওই মানবিক সংকট নিরংকুশ মনোবিকলন সৃষ্টি করে
না, যুক্তিবোধ, মনীষা এবং কার্যকারণ সম্পর্ক কবিকে আÍজিজ্ঞাসা সচেতন করে
তোলে। অশ্র“কুমার সিকদার ‘আধুনিক কবিতার আধুনিকতা’য় উল্লেখ করেছেন___‘তিনিই
আধুনিক যিনি আধুনিক কালের মানুষ, এবং যাঁর রচনায় আধুনিক পরিস্থিতি তার
জটিলতাময় সমগ্রতা নিয়ে পরিপূর্ণ মর্যাদায় প্রতিবিম্বিত হয়েছে আধুনিক কালকে
যিনি উপলব্ধি করেছেন এবং সেই উপলব্ধিকে যিনি তাৎপর্যময়ভাবে প্রকাশ করতে
পেরেছেন’। সমকালের প্রবণতা এবং যুগজিজ্ঞাসা উপলব্ধির ক্ষেত্রে যিনি ব্যর্থ,
তাঁর পে স্বকালের প্রতিচ্ছবি প্রকাশ করা সহজ নয়। আপন অভিজ্ঞতা এবং অর্জিত
জ্ঞান তাঁকে যদি কাল-সচেতন করে তুলতে না পারে, তাঁর বিপুল আত্মমগ্নতা তাঁকে
দেশকাল বিমুখ কবিতে পর্যবসিত করে। সমকাল যাকে সম্পূর্ণ উপো করে, মহাকাল
তাকে বরণমালা পরায় না। প্রকৃতিতেও ভাবনা এবং চিন্তায় ব্যবহারিক দিকের
সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিময়কে মান্য করে। দুর্ভি, ক্ষুধা, দারিদ্র্যের মধ্যে বসে
যে কবি কেবল আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠেন, সমাজ-রাষ্ট্রের দুঃসময় যার চিত্তকে
ব্যথিত করে না, তার পে উপ-কবি হওয়া সম্ভব, প্রকৃত কবি ভিন্ন ধাঁচে গড়া,
ভিন্ন সত্তা।
আধুনিক কালের প্রত্যেক কবির নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড থাকে, সে
ভূ-খণ্ডেই তার স্বস্তি। প্রতিভার উন্মেষ, বিকাশ এবং আশ্রয় ওই ভূ-খণ্ড এবং
তার স্বজাতিকে কেন্দ্র করেই। তাই সৎ কবিকে স্বদেশ-স্বজাতির প্রতি বিশ্বস্ত
থাকতে হয়। স্বজাতি-স্বদেশপ্রেম কবিকে মাহাত্ম্য দেয়, কিন্তু
স্বজাতি-স্বদেশপ্রীতির অতিরঞ্জন কবিকে করে তোলে বিশ্ববিমুখ এবং
সংকীর্ণচিত্ত। পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু দশ বছরের আত্মজা ইন্দিরাকে ‘প্রকৃতির
পাঠ’ শীর্ষক এক চিঠিতে লিখেছেন___‘আমরা যদি আমাদের এই বিশ্ব সম্পর্কে কিছু
জানতে চাই, তাহলে কিন্তু সব দেশ আর তার সব মানুষ নিয়ে ভাবতে হবে___অবশ্যই।
শুধু আমাদের ছোট জন্মভূমি নিয়ে ভাবলেই চলবে না।’ নেহেরুর এই পরামর্শ
রাজনীতিবিদ নয় কেবল, কবিদের জন্যও জরুরি। আধুনিক কালের কবির বিবেচনার কাছে
দেশ-কালের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বলোকই বিশেষ মর্যাদা পায়, উগ্র-দেশপ্রেম এবং
অন্ধ জাতীয়বাদী চেতনা তার বুদ্ধির কাছে, প্রজ্ঞার কাছে প্রশ্রয় পায় না।
শেক্সপিয়র, রবাট ফ্রস্ট, ইয়েটস, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশের নাটক ও
কবিতাগুলো পাঠ করলেই তাঁদের হৃদয়ের ঔদার্য স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ড. আহমদ শরীফ
বিষয়টি দেখেন আরও নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে। ‘সাহিত্যে দেশ-কাল ও জাতিগত
রূপ’ প্রবন্ধে স্পষ্ট বলেছেন___‘মানুষের জীবনচেতনার বারো আনাই দেশকালের
দান, বাকি চার আনা অনুশীলনলব্ধ। আবার বোধ, বুদ্ধি, জ্ঞান ও শিাভেদে মানুষের
চেতনায় ও বিকাশভেদেও বৈচিত্র্য থাকে। এই জন্যই মানুষের অভিব্যক্ত আচরণে
মগ্ন চৈতন্যের প্রভাব যত বেশি, পরিস্র“ত চেতনার স্যা তত নেই। ফলে বোধ,
বুদ্ধি ও জ্ঞান___সংস্কৃতি সম্পন্ন অগ্রসর মানুষের সংখ্যা কম।’ ইচ্ছা করলেই
কবিতা লেখা যায় না, দেশকালের দান ব্যতীত কেবল কল্পনার ওপর ভর করে বেশি দূর
অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়, তার জন্য দরকার অনুশীলন।
আধুনিক কালের কবির কাছে
অনুশীলন, পাঠাভিজ্ঞতা এবং জীবনবোধ যতটা গ্রহণীয়, ততটা অনুপ্রেরণা
নয়___অনুপ্রেরণার দোহায় পরিহাসজনক। ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ
‘অর্কেস্ট্রা’র ভূমিকায় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন___‘অবশ্য বর্তমানের
লেখনীর পাঘাত সত্ত্বেও, স্বপ্নচারী পথিককে যেমন, অনুপ্রাণিত কবিকেও আমি
তেমন ডরাই; এবং কালের বৈগুণ্যে ইন্দ্রিয়প্রত্যরে মূল্য বাড়ছে বই কমছে না।’
সুধীন্দ্রনাথ অভিজ্ঞতাকে শিল্পের জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্যে গ্রহণ করেছেন
এবং ইন্দ্রিয়প্রত্যণকে দিয়েছেন বিশেষ মর্যাদা। এই কথারই প্রতিধ্বনি মেলে
উইলিয়াম ফকনারের কথায়। নোবেলজয়ী এই ঔপন্যাসিক ১৯৫৬ সালে জ্যাঁ-স্টেইনকে
দেওয়া এক সাাৎকারে বলেছেন___‘লেখকের কাছে জরুরি হলো___অভিজ্ঞতা, পর্যবেণ
এবং কল্পনা।’ এরপর তিনি অনুপ্রেরণার বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অনুপ্রেরণার বিষয়টি কেবল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কবিদের কাছে গ্রাহ্য হয়ে
ওঠে। প্রথম শ্রেণীর কবির কাছে এর মূল্য নগণ্য। শামসুর রাহমান ‘শ্রেষ্ঠ
কবিতা’র ভূমিকায় লিখেছেন___‘কবিতা লেখার সময় কোনো এক রহস্যময় কারণে, আমি
শুনতে পাই চাবুকের তুখোড় শব্দ, কোনো নারীর আর্তনাদ, একটি মোরগের দৃপ্ত
ভঙ্গিমা, কিছু পেয়ারা গাছ, বাগানঘেরা একতলা বাড়ি, একটি মুখচ্ছবি, তুঁতগাছের
ডালের কম্পন, ধিকিয়ে চলা ঘোড়ার গাড়ি, ঘুমন্ত সহিস ভেসে ওঠে দৃষ্টি পথে
বারবার। কিছুতেই এগুলো দূরে সরিয়ে দিতে পারি না।’ এসব দৃশ্য একজন কবির
যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি জড়িত বলে, কবি এসব দৃশ্য সরিয়ে
দিতে পারেন না। ফলে তাঁর কাছে অভিজ্ঞতাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কিন্তু
এরপরও চিন্তার দৈন্য, মননের দারিদ্র্য এবং কল্পনার আড়ষ্টতা কবিতাকে
ভাবালুতায় পর্যবসিত করে। তাই, প্রকৃত কবি শিল্পকলা এবং জ্ঞান-প্রপঞ্চের
প্রত্যেক শাখারই সারবত্তা আত্মস্থ করে, তাকেই ভাবে-ভাষায় রূপান্তরিত করেন।
সব সময় দিনানুদিনের ঘটনা প্রবাহ নয়; প্রায় অনিত্য ঘটনা এবং অনুভূতি ও
উপলব্ধিই কবিতার বিষয় হয়ে ওঠে___সঙ্গে কেবল কল্পনা নয়, অভিজ্ঞতা এবং
পর্যবেণলব্ধ মনীষা কবিতাকে প্রমূর্ত করে তোলে। এ কারণেই কালজ্ঞান এবং মনীষা
কবির স্বাতন্ত্র্যের পথে গুরুত্বপূর্ণ।